গত ১১ এপ্রিল থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। সাত দফা ভোটের মধ্যে ইতিমধ্যেই সাঙ্গ হয়েছে প্রথম তিন দফার ভোটপর্ব। তবে তিন দফার ভোট হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত দেখা নেই ‘মোদী লহর’-এর। যেই মোদী লহরের ওপর ভর করেই গতবার ভোট বৈতরণী পেরিয়েছিল গেরুয়া শিবির। খোদ বিজেপি নেতা-মন্ত্রীরাই জানাচ্ছেন, দেশে আগের মতো নরেন্দ্র মোদীর পক্ষে কোনও হাওয়া দেখতে পারছে না তাঁরা। বিজেপির একার জোরে সরকার বানানো কঠিন বলেই মত তাঁদের। অন্যদিকে, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বিজেপির ওপর চড়াও হওয়া শুরু করলেন শরিক দলের নেতারা।
কয়েক বছর ধরে লাগাতার স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়ে অবশেষে মহারাষ্ট্রে সমঝোতা করে লড়ছে বিজেপি-শিবসেনা। কিন্তু তিন দফা ভোটের পর সেই শিবসেনাই এখন বলছে, দেশে কোনও এক দলের সরকার হবে না। শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘যে ছবি আমার সামনে আসছে, তাতে দেশে কোনও একটি দল ক্ষমতায় আসবে না। ক্ষমতায় আসবে এনডিএ। আমরা সকলে এনডিএ-র শরিক। এনডিএর সরকারই তৈরি হতে চলেছে।’ দিল্লীর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শিবসেনার এই উক্তির পিছনে লুকিয়ে আছে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি। আগামী দিনে যার মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটে প্রবল মোদী-ঝড়ে এনডিএ তিনশো আসন পার করেছিল। বিজেপিই একার জোরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি যা, তা দেখে বিজেপির কোনও শীর্ষ নেতা এখনও পর্যন্ত দাবি করতে পারেননি, গত বারের আসন ধরে রাখা সম্ভব। বাকি আছে আর চার দফার ভোট। তাতেও তেমন আশাব্যঞ্জক কিছু ঘটবে বলে মনে করছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে শরিক দল এখন থেকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, এনডিএ সরকারে এলে আর বিজেপির ‘দাদাগিরি’ চলবে না।
প্রসঙ্গত, ভোটের আগে বিভিন্ন সময়ে বিজেপির শরিকদের রোষ প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু কোনও ভাবে সেটিকে ধামাচাপা দিয়েছে বিজেপি। মোদীর পক্ষে যে হাওয়া দেখা যাচ্ছে না, সে কথা মানছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারাও। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দাবি করেছেন, ভোটের এখনও অনেক দফা বাকি। যে ভাবে ভোট গড়াবে, মোদীর পক্ষে হাওয়া ‘সুনামি’র আকার নেবে। ‘হাওয়া দেখা যাচ্ছে না কেন?’- এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এ বারের ভোট মানুষের ‘আশীর্বাদ’ চাওয়ার ভোট। পাঁচ বছরে তিনি যে কাজ করেছেন, এবারে তার প্রতিফলন ঘটছে।
কিন্তু নেতারা মুখে যা-ই বলুন, বিজেপির ভিতরের সমীক্ষাও এখনও পর্যন্ত স্বস্তিতে রাখেনি দলের নেতৃত্বকে। সমীক্ষা বলছে, একার জোরে বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারছে না। উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে মায়া-অখিলেশের জোটের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে কম করে ২০-৩০টি আসন। গত ভোটে মোদী-শাহের রাজ্য গুজরাত-সহ গোবলয়ের রাজ্যগুলিতে সর্বাধিক আসন পেয়েছিল বিজেপি। আসন কমছে সেখানেও। কিন্তু খামতি মেরামত করার জন্য দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব প্রান্তে যে আশা ছিল, সেখানেও খুব বেশি আসন বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সবমিলিয়ে অবস্থা এমনই যে, মোদী হাওয়ার বদলে এখন গোটা দেশ জুড়ে বইতে শুরু করেছে মোদী বিরোধী হাওয়া। যা খুব একটা স্বস্তিতে রাখছে না গেরুয়া শিবিরকে।