‘বিশ্বকাপ জেতা আমার জীবনে সবচেয়ে গর্বের ব্যাপার…..আমি আমার চোখের জল আটকাতে পারি নি।’ বক্তার নাম শচীন রমেশ তেন্ডুলকার।
২০১১ সালের ২ এপ্রিল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমে যখন ক্যামেরা ধরা হয়েছিল তখন দেখা গিয়েছিল শচীনের চোখে জল। ক্রিকেটের ভগবান কাঁদছে। আনন্দের কান্না। যার জন্য তিনি অপেক্ষা করছেন ২৪ বছর। সেই প্রাপ্তি তাঁর কাছে ছিল সবচেয়ে মূল্যবান।
আর আজ সেই দিনে বিশ্বের অগণিত মানুষের সঙ্গে জন্মেছিলেন শচীন, যার জন্ম না হলে ক্রিকেট পেতোনা তার পূর্ণতা! যার আগমন না ঘটলে তার নামে পুজো করার সুযোগ হারাত দেড় শ’ কোটি ভারতীয়। ৪৬ বছরে পা রাখলেন তিনি। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে এপ্রিল নির্মল নার্সিং হোমে শচীন তেন্ডুলকর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রমেশ তেন্ডুলকর একজন মারাঠি ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর মাতা রজনী তেন্ডুলকর বীমা কোম্পানিতে কাজ করতেন। রমেশ বিখ্যাত ভারতীয় সুরকার শচীন দেববর্মণের নামানুসারে তাঁর নাম শচীন রাখেন। ছোটবেলায় শচীন জন ম্যাকেনরোকে আদর্শ করে টেনিস খেলার প্রতি আকৃষ্ট হলেও তাঁর দাদা অজিত ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে দাদরের শিবাজী পার্ক অঞ্চলে বিখ্যাত ক্রিকেট কোচ রমাকান্ত আচরেকরের কাছে নিয়ে যান। আচরেকরের নির্দেশে দাদরের শচীনকে শারদাশ্রম বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। আর তারপর থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর মেধার উপর ভর করে জীবনের একের পর এক হাডেল পার করেন। কোনকিছুতেই দমে যান নি তিনি।
১৯৮৯ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করে ২০১৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত খেলেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২০০টি টেস্ট ও ৪৬৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ (ওডিআই) রয়েছে তার ঝুঁলিতে। ২৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলেছেন টি-টোয়েন্টিও। ক্রিকেটের সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩০ হাজারের বেশি রান এবং ২০০ এর বেশি উইকেট রয়েছে তার ঝুঁলিতে। ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর করাচীতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব। বাকিটা ইতিহাস। ১৭ বছর বয়সে টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরি। টেস্ট ও ওডিআইতে সবচেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরির মালিক শচীন ৩৬ বছর বয়সে ওডিআইতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান। ব্যাটিংটাকে শিল্পের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন কোঁকড়া চুলের মায়াময় চেহারার শচীন। হয়েছেন নায়ক থেকে মহানায়ক।
আজ ৪৫ বছরে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয় নি। হবেও না। তাঁর সঙ্গে তুলনা চলে না কারোর। শচীনের তুলনা একমাত্র তিনি নিজেই। সব রেকর্ড যে একটা জীবনে ছোঁয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণের নাম শচীন তেন্ডুলকার। মাঠ ও মাঠের বাইরে শচীন এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর দিনে অঝরে কেঁদেছিল ভারতবাসী, গোটা বিশ্ববাসীও। শচীনরা কি বারবার আবির্ভূত হন! আমরা গর্বিত এমন একজনকে ভারতীয় হিসেবে পেয়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষ শত দুঃখের মধ্যেও তাঁর খেলা দেখে হাসত। আজও অগুনতি মানুষ তাঁর পুরোনো খেলা বারবার দেখেন আর আগামী প্রজন্মকে কিছু ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগায়। এই মানুষটিকে বিশ্ববাসীর পক্ষ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ভালো থাকুন দেবতা।