জেট বাঁচাতে কোনও আশ্বাস দেননি মোদী সরকার। অরুণ জেটলি শোনাতে পারেননি কোনও ভরসার বাণী। বিজেপির ‘আচ্ছে দিনে’ কাজ হারাতে বসেছেন জেটের অসংখ্য কর্মী। শেষ পর্যন্ত পরনে ইউনিফর্ম, হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভে নামলেন তাঁরা। দিল্লী, মুম্বইয়ের পর এ বার কলকাতায় হল তাঁদের বিক্ষোভ সমাবেশ। জেট কর্মীদের কান্নায় ভিজল নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বুধবার সকালে কলকাতা বিমানবন্দরের গেটে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন জেট কর্মীরা। এঁদের সকলেরই পরিচয়, ঝাঁপ ফেলে দেওয়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান সংস্থার কর্মী। প্রতিবাদে উচ্চ-নিম্ন পদের ভেদাভেদ নেই। মিছিলে যেমন আছেন পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী, তেমনই রয়েছেন গ্রুপ ফোর স্টাফও। সকলেরই বেতন আটকা পড়েছে তিন মাসেরও বেশি। সকলেরই মনে আশা জেট ফিরবে একদিন। কালো দিন পেরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে সংস্থা। প্রতিবাদকারীদের স্লোগান একই, ‘জেটকে বাঁচান, আমাদের আবার আকাশে উড়তে দিন।‘ পাশ থেকে জনা কয়েক পাইলটকে বলতে শোনা গেল, ‘তাড়াতাড়ি করুন, আমাদের লম্বা পথ যেতে হবে।
জেটের কাঁধে এই মুহূর্তে ৮,৫০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ঋণের বোঝা। সেই সঙ্গে কর্মীদের বকেয়া বেতন। ফেরত দিতে হবে বাতিল যাওয়া উড়ানগুলির টিকিটের দামও। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে জ্বালানি সংকট। ফলে অনেকে মনে করছেন, নতুন করে লগ্নিকারীরা পুঁজি না ঢাললে এর পরে জেটের চাকা কী ভাবে গড়াবে তা বলা বেশ কঠিন। এই বোঝা মাথায় নিয়ে সংস্থা আপাতত তাকিয়ে নিলাম প্রক্রিয়ার দিকে। যার ফলাফল বুঝতে এখনও অন্তত দু’তিন সপ্তাহ বাকি। জেট ফের ডানা মেলবে কি না তার উত্তর নেই ২২,০০০ কর্মীর কাছে। সংস্থার সিইও বিনয় দুবে পাইলটদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, জেট আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আকাশ দখলের লড়াইয়ে ফের একবার নিজের বীরত্ব দেখাবে। তবে আশ্বাসই সার, আদৌ সেটা পরিণতির দিকে এগোবে কি না জানা নেই সংস্থার হাজারের বেশি পাইলটদের।
ভারতের এখন যে কটি বেসরকারি বিমান সংস্থা রয়েছে, জেট তাদের মধ্যে সব থেকে পুরনো। ১৯৯৩ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে জেট। প্রথম আর্থিক সংকট তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে বার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন নরেশ গয়াল। তবে এ বারের অবস্থা ভিন্ন। জেটের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন গয়াল ও তাঁর স্ত্রী।
এ দিনের প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন জেট কর্মী সুদেষ্ণা গুহ। ‘আমাদের আবেদন বলুন নিবেদন বলুন, দয়া করে জেটকে বাঁচান। আমাদের আকাশে উড়তে দিন। জেটের এত সুন্দর একটা পরিবার ছাড়খাড় হয়ে যেতে বসেছে, দয়া করে কিছু করুন।’ কথা বলতে বলতেই চোখ ছলছল করে উঠল সুদেষ্ণার। বললেন, ‘আমাদের একটাই অনুরোধ, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফান্ড রিলিজ করে জেটকে বাঁচান। আমরাও দেখিয়ে দিতে চাই যে আমরাও পারি, সবাই যদি পারে তাহলে আমরাও পারি। আমাদের নতুন করে শুরু করতে দিন।’ তাঁর দাবি, শুধু ২২ হাজার কর্মী নন, জেট সংস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রায় এক লক্ষ পরিবার তছনছ হয়ে যাবে সংস্থা বন্ধ হয়ে গেলে।