চলতি লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মমতাবালা ঠাকুর। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন তাঁর শাশুড়ী মতুয়াদের বড়মা বীণাপাণি দেবী। সেই শোকের আবহ কাটেনি এখনও। তবুও তারই মধ্যে প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। গত নির্বাচনেও জয়ী হয়েছিলেন তিনি। এবারের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
তবে সংসার থেকে রাজনীতির ময়দান এই যাত্রাপথটা সহজ ছিল না একটুও। বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে এপার বাংলায় শরণার্থী হয়ে এসেছেন ১৯৬৪ সালে। বাবা ডাঃ লক্ষ্মণচন্দ্র বর। লক্ষ্মণবাবু চলে যান মহারাষ্ট্রে। চন্দ্রপুর জেলায় শরণার্থী শিবিরে ১৯৬৭ সালের ১৫ মে মমতাবালা জন্মেছেন। সেখানেই বেড়ে ওঠা মমতাবালার। পাঁচ বোন। এক দাদা। এক বোন মারা গেছেন। পড়াশোনা বেশি করতে পারেননি।
মাত্র ১৮ বছর বয়সে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের সঙ্গে বিয়ে। এলেন গাইঘাটার ঠাকুরবাড়িতে। মমতাবালার স্বামী কপিলকৃষ্ণ তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে বনগাঁ থেকে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে জেতেন গৃহবধূ মমতাবালা। স্বামীকে হারিয়ে কিছুটা একা হয়ে গিয়েছিলেন। একাকিত্ব কাটাতেই শাশুড়ির নির্দেশে সামাজিক কাজ শুরু করেন। ভক্তদের নিয়ে থাকতেন। তারপরে উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পা দেন রাজনীতির ময়দানে।
তিনি জানালেন, “‘শাশুড়ি আমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। প্রাণভরে আশীর্বাদ করেন। শরণার্থী শিবির থেকে অন্য জগতে। খাপ খাওয়াতে সময় বেশি লাগেনি। ক্যাম্পে যাঁরা থেকেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা একেবারে অন্যরকম। সংসার চালাতে বাবা–মায়ের কষ্ট হত ঠিকই, কিন্তু ক্যাম্পের লোকজনদের মেলামেশা ছিল একটু আলাদা। আন্তরিকতা ছিল। একজন আরেকজনের খোঁজ রাখত। সাহায্য করত। খারাপ লাগত না। আমার বাবা–মা আমাদের কষ্ট বুঝতে দেননি। বড় সংসার ছিল আমাদের”।
মহারাষ্ট্রে বহুদিন যাওয়া হয় না। মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয় মমতাবালার। যাওয়ার সময় কোথায়? ভক্তদের ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয় না। বললেন, ‘এটাই আমার বড় সংসার।’ গত ৪ বছর ধরে সাংসদ তহবিলের টাকায় বহু কাজ করেছেন। জিতে এলে, এলাকায় ফ্লাড সেন্টার তৈরি করার ইচ্ছা আছে। বন্যার সময় নিরাশ্রয় মানুষ এখানে এসে থাকতে পারবেন। সাংসদ তহবিলের সব টাকাই খরচ করে ফেলেছেন। ইছামতীর সংস্কার হয়েছে। বহু স্কুলের বাউন্ডারি দেওয়াল দেওয়া হয়েছে, রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে, পানীয় জলের অভাব নেই, কবরস্থান ও শ্মশান হয়েছে, ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। বললেন, ‘মমতাদিও বহু কাজ করেছেন।’
মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। তবে প্রোটিন হিসেবে মাছ খান। ২০১৫ লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার পর এতবড় সংসার ছেড়ে তাঁকে দিল্লি যেতে হয়। সেখানেও বিভিন্ন জায়গা থেকে দিল্লির ফ্ল্যাটে ভক্তরা আসেন। মাঝেমধ্যে একা লাগে। নানা ধরনের বই পড়ে সময় কাটিয়ে দেন। টিভির খবর ছাড়া অন্য কিছু দেখেন না। সময়ও পান না। ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের খারাপ ও ভাল দিকও আছে বলে মমতাবালা মনে করেন। তাঁর ধারণা, তবে এগুলোতে ভোটে কোনও প্রভাব পড়ে না। মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য শাশুড়ি থেকে শুরু করে তাঁর স্বামী লড়াই করেছেন।
তিনি জানালেন “ নাগরিকপঞ্জি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ করছেন। কারা থাকবেন, কারা থাকবেন না, কাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে, এই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিজেপি। মমতাদি যে কাজ করেছেন, তার ধারকাছ দিয়ে কেউ যেতে পারবে না। উন্নয়ন কাকে বলে মমতাদি দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর আশীর্বাদ পেয়ে আমি ধন্য। আমাদের বাড়িতেও শাশুড়ির ১০০ বছর জন্মদিন উপলক্ষে এসেছিলেন”।