তাঁর দিদি রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার টার্গেট রেখেছেন। তাই নিজের এলাকায় চারটি বুথে গতবারের ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নিতে তাই সকাল থেকে টো-টো করে ঘুরছেন তিনি। রাজ্যের সব তৃণমূল কর্মীর কাছেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদি’। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কুসুম্বার নীহার মুখোপাধ্যায়ের আক্ষরিক অর্থেই দিদি। নীহার সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাই। রামপুরহাটের কুসুম্বায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি। তাঁর দিদি এই অঞ্চলের নিজস্ব ‘নালতে’ ও ‘পোনকা’ শাক ভারি পছন্দ করেন। কুসুম্বার মুড়ি ও চিঁড়েও দিদির অত্যন্ত প্রিয়। নীহার তাই ঠিক করেছেন, ২৩ তারিখ ভোটের ফল প্রকাশের পরে দিদির জন্য রামপুরহাটের ‘নালতে’ ও ‘পোনকা’ শাক এবং চিঁড়ে-মুড়ি নিয়ে যাবেন।
‘এই নালতে শাক কিন্তু আদতে পাট শাক নয়। খুব ছোট ছোট পাতার শাক। দিদি যখন এখানে আসে এই শাকের খোঁজ করে। এখানের পোনকা শাকও দিদি খুব পছন্দ করে’, মমতার শাক-প্রীতির প্রসঙ্গে বলেন নীহার। বয়সে মমতার থেকে কিছুটা ছোট কুসুম্বার মুখোপাধ্যায় পরিবারের এই ছেলে। মমতার মতোই যুব কংগ্রেস করে রামপুরহাটের এই অঞ্চলে রাজনীতিতে নিজের জমি তৈরি করেছেন নীহার। তাঁর মুখে পুরোনো দিনের কথা শুনতে কুসুম্বার বিখ্যাত বাড়িতে হাজির গ্রামবাসীরাও। নীহার বলেন, ‘তখন দিদি ট্রেনে করে আসত। স্টেশন থেকে ভ্যান-রিকশায় গ্রামে। রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো ছিল না। আট-দশ দিন করে দিদি তখন থাকত।’
যদিও কুসুম্বায় মামারবাড়ি এসে মমতা কোনও দিনই রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা বলেননি। তবে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার পরে নীহারের নেতৃত্বে কুসুম্বার যুব কংগ্রেসের পুরো টিম তৃণমূল হয়ে যায়। ২০১২ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম নীহার জয়ী হন। নীহারের স্ত্রী পম্পা আগে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ বারেও তিনি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। নীহার এখন বীরভূম জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। সব মিলিয়ে দায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় নীহারের নির্বাচনী ব্যস্ততাও বেড়েছে। তাঁর কথায়, ‘সকাল ১০টার আগে বেরিয়ে যাই। মিছিল-সভা হয়। দুপুর একটা দেড়টা নাগাদ ফিরি। খাওয়াদাওয়া করে একটু বিশ্রাম। ফের চারটের পর বেরিয়ে পড়ি। তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর রামপুরহাটে নয়-নয় করে ৩০-৩৫টি সভা করে ফেলেছি। সামনে আর কয়েকটি দিন। তাই ব্যস্ততা আরও বাড়বে।’
উল্লেখ্য, কুসুম্বায় চারটি বুথে ২০১৬ বিধানসভায় মোটামুটি ১৫০-২০০ ভোটের লিড নিয়েছিল তৃণমূল। এ বার সেই ব্যবধান আরও বাড়াতে চান নীহার। দিদির মতো আত্মবিশ্বাসের সুরে ভাইও সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান বাড়বে। কুসুম্বার বুথেও ব্যবধান বাড়বে।’ কুসুম্বায় বিজেপি এখনও মাথা তুলতে পারেনি বলেও দাবি করেন নীহার। তাঁর বক্তব্য, ‘এই তো অমিত শাহর সভা হয়েছে। কুসুম্বা থেকে ১০ জন গেছে বলেও শুনিনি। শুধু তাই নয়, এখানে ওদের হয়ে দেওয়াল লেখার লোক পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’