কান পাতলে খোদ মোদীর গড়েই এখন শোনা যাচ্ছে দিদির জয়গান। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। গুজরাতে বসেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুণগান গাইছেন সে রাজ্যে বাইরে থেকে কাজ করতে আসা শ্রমিক-মজুরেরা। প্রসঙ্গত, উড়িষ্যার গঞ্জাম, বাংলার হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, বিহারের কাটিহার, দ্বারভাঙ্গার প্রচুর শ্রমিকই সুরাতের ট্রেনে চাপে। তাঁদের লক্ষ্য, সেখানের পাওয়ারলুম, জরি কারখানা আর সিল্কের এমব্রয়ডারিতে একটা কাজ জোটানো।
যেমন হাওড়ার ডোমজুড় থেকে জরির কাজে এসেছেন, সুভাষ গোলদার। তিনি জানান, ভাড়া বেশি হওয়ার জন্য ৫০০ স্কোয়ার ফুট ঘরে প্রায় ২৫ জনকে থাকতে হয়। প্রত্যেকের মাথার কাছে থাকে একটা করে ব্যাগ। ওটাই সংসার। আর ঘরে একঝাঁক দড়ি লাগানো এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তাতে গামছা, জামা, প্যান্ট ঝুলছে। যে যেখানে শুয়ে আছেন, তার মাথার ওপরের দড়ির অংশটি তাঁর এলাকা। ঘরের দু’প্রান্তে দু’টি ফ্যান চলছে। তাতে হাওয়া যত, তার থেকে বেশি জমে থাকা ধুলো, ময়লা, ঝুল। এই হল এখানকার মেস। কোথাও নাম মহাবীর মেস, কোথাও মহল্লা বাড়ি মেস, কোনওটার নাম ভোলাগিরি মেস।
তাঁর কথায়, মেস নামক এই ঘরগুলির কোনও জানালা থাকে না। দেওয়ালে ড্যাম্প। ঘর সারানো হয় না কোনওদিনই। ঠিক যেভাবে কোনও পাওয়ারলুম মেশিনও সারানো হয় না। সার্ভিসিং না হওয়া মেশিনে কাজ করতে করতে নিয়ম করে আঙুল কেটে যাবে। কোনও সময় বাদও চলে যেতে পারে। সে ঘটনা ঘটেছে আকছার। আর মেশিনের মধ্যে যখন ভালো করে সুতোটা ঢুকছে না, তখন হাত দিয়ে ঢোকানোর সময় অল্প স্বল্প ইলেকট্রিক শক লাগেই। আর কখনও সখনও আবার এতটাই বেশি শক লাগবে যে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু।
নিয়ম অনুযায়ী একটা পুলিশ কেস হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা বেশিদিন চলে না বলেই জানান সুভাষ। কারণ, স্ট্যান্ডার্ড ২ লক্ষ টাকা লেবারের পরিবারকে আর ৫০ হাজার টাকা পুলিশকে দিয়ে সেইসব পাওয়ারলুম মালিকদের গাফিলতির অপরাধ সংবলিত কেস বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে কেউ যদি এসব থেকে কেউ বেঁচেও যায়, তাহলে কয়েক বছর পর তাঁর টিবি অবধারিত। কিন্তু জরির তুলনায় তবুও পাওয়ারলুম মেশিনে তাৎক্ষণিক পেমেন্ট পাওয়া যায়। তাই কাজ শিফট করেছেন হাওড়ার সুভাষ।
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের সন্তোষ মণ্ডল আবার এখনও জরি শিল্পে জড়িয়ে আছেন। উত্তর সুরাতের ফুলওয়াদির এমব্রয়ডারি ইউনিটে কাজ করেন তিনি। বাড়ি ফেরার সময়ই পান না তিনি। সময় নয়, আসলে ভরসা। সন্তোষ বলেন, ‘একটা রিস্ক আছে। ফিরে এসে যদি কাজ না থাকে! এখানে তো কোনও কন্ট্রাক্ট নেই! যেভাবে ছাঁটাই হচ্ছে, একবার যদি এসে দেখি কাজটা আর ফিরে পেলাম না, তাহলে তো খুব বিপদে পড়ব।’
এই বছরভর ঘর ছেড়ে বাইরে আসা বাঙালি মজুরের দল ভোট দিতে অবশ্যই যাচ্ছেন। তিনদিনের ছুটিতে। কুমার পাল, পলাশ মাইতিরা স্পষ্ট জানান, দিদিকেই ভোট দেবেন তাঁরা। কন্যাশ্রী, গীতাঞ্জলি আর শিক্ষাশ্রী, শিশুসাথীর স্কিমে গরিবদের যে কত উপকার হয়েছে, তা নিয়েই মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ কুমার, পলাশরা। তাঁদের কথায়, এখানে পেমেন্ট দেরিতে পেলেও কোনও টেনশন হয় না। কারণ আগের মতো ওরকম সপ্তাহে সপ্তাহে টাকা বাড়িতে না পাঠালেও চলে। গীতাঞ্জলীতে বাড়ি করার জন্য ৭০ হাজার টাকা করে পেয়েছি আমরা। তাই ভোট দিদিকেই।