ব্রহ্মপুত্রের তীরে বাংলা লাগোয়া ধুবরি। আসামের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। স্বাধীনতার পর থেকেই ধুবরি লোকসভা আসন ছিল কংগ্রেসের দখলে। বার কয়েকের ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই আসন কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলেই বিবেচিত হতো। সেই ধুবরির রাজনৈতিক বিন্যাস বদলে গেছে আতর বাদশা বদরুদ্দিন আজমলের অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর সুবাদে। সেই আজমলের গড়ে মমতার খোঁজ? শুনতে অবাক লাগলেও, ব্রহ্মপুত্র পাড়ে বাংলা লাগোয়া ধুবরিতে এটাই বাস্তব। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে আসামের ভোট প্রচারের শেষ লগ্নে আতর বাদশা আজমলের পাড়ায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল নেত্রীর নামে পোস্টার, মাইক্রোফোন বাহিত স্লোগান। শুনে ধন্দ লাগারই কথা।
প্রসঙ্গত, প্রথমে বিধানসভা, তারপর ২০০৯ সাল থেকে টানা এআইইউডিএফ-এর প্রতিনিধি হিসেবে আজমল সংসদ সদস্য। তবে তিনি একাই নন, বিদায়ী লোকসভায় তাঁকে নিয়ে তিনজন প্রতিনিধি রয়েছে ফ্রন্টের। কিন্তু বাংলাভাষী মুসলমান অধ্যুষিত এই লোকসভা কেন্দ্রের আপাত নিস্তরঙ্গ একমুখী রাজনীতির রসায়ন বদলে গিয়েছে গত জুলাই থেকে। প্রথমে এনআরসি ও পরে নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী প্রতিবাদে মমতার অগ্রণী ভূমিকায় মুসলমান সমাজে আজমলের একচ্ছত্র আধিপত্যে ভাঙন ধরেছে। তাঁদের প্রচারের আলোয় ভাগ বসিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলনেত্রীর এই জনপ্রিয়তাকে সামনে রেখেই এবার ধুবরিতে জোড়া ফুল ফোটানোর স্বপ্ন দেখছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
অন্যদিকে, গত এক দশকে আসামের রাজনীতিতে মুসলমান বাঙালির মসিহা আজমল এবার একটু অস্থির। এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিলের তুমুল প্রতিবাদ করে গোটা দেশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ঝড় তুলে দিয়েছেন, তাতেই বেসামাল ধুবরির নির্বাচনী পরিমণ্ডল। তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন মুখের উপস্থিতিতে মুসলমান ভোটের একচেটিয়া দখলদারিতে বদরুদ্দিন আজমলের এতদিনের হিসেব গুলিয়ে গেছে। পেশায় মণিহারি দোকানদার ইউনুস বিশ্বাস জানান, এনআরসি নিয়ে যেভাবে মমতা সরব হয়েছেন তা দেখে সকলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তাঁর সাফ কথা, দেখবেন ওই মহিলা দিল্লী গেলেন বা না গেলেন, নাগরিকত্ব বিল পুড়িয়ে দেবেনই। নরেন্দ্র মোদীর সাধ্য নেই তা রোখার।
ধুবরির তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম চৌধুরী। দলনেত্রী তাঁকে প্রার্থী করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে মমতা প্রথম পর্বে এই ধুবরিতেই জনসভা করেছেন তাঁকে নিয়ে। বাংলার বসিরহাটের প্রার্থী চিত্রতারকা নুসরত জাহান রোড শো-ও করেছেন। বাংলার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই রাজ্যের পর্যবেক্ষক। দফায় দফায় এসেছেন। সংগঠন তৈরিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সেই সুবাদেই ধুবরির বিশিষ্ট আইনজীবী এবং অল অসম ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি নুরুলের শিক্ষিত সমাজে পরিচিতি আছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এআইইউডিএফের সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হলেও, মমতাদির কল্যাণে সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরবেই। তার সঙ্গে ভাষাগত সংখ্যালঘু অর্থাৎ অসমিয়া ছাড়াও কিছু হিন্দিভাষী ও জনজাতির ভোট জোড়া ফুলে পড়লে সব হিসেব উল্টে যেতে পারে।’ হিসেব যে উল্টে যেতে পারে, এ কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরাও।