২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কলম্বো। সেন্ট অ্যান্টনিস গির্জার কাছেই দাঁড়ানো ছিল বিস্ফোরক বোঝাই একটি ভ্যান। সূত্রের খবর, গির্জার কাছেই একটি নতুন বোমার খোঁজ পেয়েছিল পুলিশ। সেটি নিষ্ক্রিয় করার সময়েই বিস্ফোরণ ঘটে। যদিও এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি সিরিসেনা।গতকাল থেকে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৯০। গুরুত জখম ৫০০।
ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর থেকেই শ্রীলঙ্কার নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন এনটিজে বা ন্যাশনাল তাওহিত জামাত জঙ্গি সংগঠনের নাম উঠে আসছিল। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কেউ দায় স্বীকার না করায় এই নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। সোমবার সরকারের মুখপত্রে সেই আশঙ্কায় সিলমোহর দিলেন। শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই চরমপন্থী মুসলিম সংগঠনই ইস্টার সানডে–তে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
যাঁরা এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারা সকলেই শ্রীলঙ্কার নাগরিক বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রজিতা সেনারত্নে। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় জনিত সন্দেগে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সোমবার সকাল থেকে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি মৈত্রিপলা সিরিসেনা। সোমবার ভোর ছটায় কার্ফু কিছুক্ষণের জন্য জারি করা হলেও সোমবার রাত আটটা থেকে মঙ্গলবার ভোর চারটে পর্যন্ত কলোম্বয় কার্ফু জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
রবিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ প্রথম বিস্ফোরণ হয় কলম্বোতে। তারপর গতকাল ৬ ঘণ্টায় পরপর ৮ বার ধারাবাহিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল শ্রীলঙ্কার রাজধানী। তিনটি পাঁচতারা হোটেল এবং তিনটি গির্জায় বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল নিমেষে শ্মশান হয়ে যায় গোটা এলাকা। ভেঙে গিয়েছে কলম্বোর শতাব্দী প্রাচীন ক্যাথলিক গির্জা সেন্ট অ্যান্টনিস। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ‘সিনামন গ্র্যান্ড’, ‘সাংগ্রি লা’ এবং ‘কিংসবেরি’—–এই তিনটি পাঁচতারা হোটেলে।
শ্রীলঙ্কায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণের জেরে ভারতীয় উপকূল বাহিনীকেও পাঠানো হয়েছে সতর্কবার্তা। গতকালের বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ ভারতীয়। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাড়ছে আহতদের সংখ্যাও।
গতকালের বিস্ফোরণে নিহত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাতি। শেখ হাসিনার ভাইপো তথা শাসক আওয়ামি লিগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মেয়ে-জামাই ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। তাঁদের সঙ্গে ছিল তাঁদের দুই সন্তান জায়ন ও জোহান। ওই পরিবারটি উঠেছিল কলম্বোর শাংগ্রি লা হোটেলে। গতকাল সকালে ওই হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গীরা। এই বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় বছর আটের জায়নের। জায়নের বাবাও গুরুতর আহত। জায়ন ও তাঁর বাবা বিস্ফোরণের সময় হোটেলের এক রেস্তোরাঁয় খেতে গেছিলেন। সেখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। আর তাতেই প্রাণ যায় বছর আটের এক ফুটফুটে শিশু।