গতবার গোটা দেশ জুড়ে উঠেছিল ‘মোদী লহর’। কিন্তু এবার তার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং এই মুহূর্তে চরম বিজেপি বিরোধী হাওয়ায় ছারখার হতে বসেছে পদ্মবন। ফলে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে
যে রাজ্যগুলি থেকে বিপুল আসন নিয়ে এসে একক গরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিজেপি, এবার সেইসব রাজ্য নিয়েও গভীর সংশয় গেরুয়া শিবিরে। কারণ গোবলয়ের যে রাজ্যের প্রায় সব আসনেই ২০১৪ সালের ভোটে জয়ী হয়েছিল বিজেপি, সেই মধ্যপ্রদেশে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে এবার রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তারা।
২০১৪ সালের ভোটে মধ্যপ্রদেশের ২৯টি আসনের মধ্যে ২৭টি আসনেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। মাত্র কয়েকমাস আগেই সেই রাজ্যে বিধানসভা ভোটে পরাজিত হয়ে সরকার হারিয়েছে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশে যে ক্ষমতাচ্যুত হতে হবে তা ভাবতেই পারেনি মোদী-শাহেরা। সেই ধাক্কার কারণেই এখনও মধ্যপ্রদেশের একঝাঁক হাই প্রোফাইল ও প্রেস্টিজিয়াস আসনে প্রার্থী বাছাই করতে পারেনি বিজেপি। যে আসনগুলি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রবল সঙ্কটে পড়েছেন সেগুলি হল ইন্দোর, ভোপাল, বিদিশা, গুনা।
ইন্দোরে ১৯৮৯ সাল থেকে টানা সাংসদ ছিলেন বিজেপির সুমিত্রা মহাজন। ষোড়শ লোকসভায় স্পিকারও হন তিনি। এবারও পুনরায় তাঁকে প্রার্থী করা হবে এরকমই আশা পোষণ করেছিলেন সুমিত্রা এবং তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু বহুদিন অপেক্ষার পরও ইন্দোরে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হল না দেখে দলের ওপর অভিমান করে সুমিত্রা নিজেই চিঠি লিখে এ কথা ঘোষণা করেন যে তিনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে মোদী-শাহ-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতারা যে দ্বিধায় আছেন, তা অনুভব করে সুমিত্রা ক্ষুব্ধ হয়ে সেই চিঠিতে লিখেছিলেন শ, বিজেপিকে আমি মুক্তি দিলাম দ্বিধা থেকে। এখন ইন্দোর থেকে যাকে ইচ্ছে প্রার্থী করতে পারে তারা। আমি আর লড়াই করব না। মহাজনের ওই ঘোষণার পর ১৫ দিনেরও বেশি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও ইন্দোরের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
একইভাবে হাই প্রোফাইল কেন্দ্র বিদিশা। এখান থেকে লাগাতার বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেত্রী তথা বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জিতে এসেছেন। তবে এবার যে তিনি প্রার্থী হবেন না, সে কথা আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি। আর সেখানেই বিপাকে পড়েছে বিজেপি। ওরকম একজন হাই প্রোফাইল প্রার্থী, সাংসদ ও বিদেশমন্ত্রীর পর ওই আসনে কাকে টিকিট দেওয়া যায় তা স্থির করা যাচ্ছে না। এদিকে ভোপাল নিয়ে জোর জল্পনা আর চর্চা চলছে জাতীয় রাজনীতিতে।
কংগ্রেস ওই কেন্দ্রে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিংকে প্রার্থী করে যথেষ্ট বড় চমক দিয়েছে। যার ফলে বেশ ভাল মতোই চাপে পড়েছে বিজেপি। এখন এই আসনে এমন কাউকে প্রার্থী করতে হবে যিনি ক্যারিশমা আর প্রভাবে দিগ্বিজয়কে টেক্কা দিতে পারেন। সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারানো শিবরাজ সিং চৌহান এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণের অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞার নামও বিবেচনায় আছে। কিন্তু এখনও স্থির করা হয়নি কাকে প্রার্থী করা হবে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কেন্দ্র গুনাতেও প্রার্থী ঠিক করতে পারছে না বিজেপি। আসলে ভোটের আগে থেকেই হিন্দি বলয়ের এ রাজ্যে ভরাডুবির ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে পদ্মশিবিরকে।