যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই বলেন, “নারীশক্তি যাঁদের সঙ্গে থাকে তাঁদের কোনও অশুভ শক্তি আটকাতে পারে না”। তাঁর এই কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। বাংলায় নারীশক্তির অন্যতম প্রতীক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার নারীরাও সংসার সামলে ভোটের কাজে যোগ দিচ্ছেন।
[Total_Soft_Poll id=”5″]
আসলে বাংলার মেয়েদের জন্যে মমতার অবদান অনস্বীকার্য। নারীশক্তি যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাঁর সৌজন্যে তা ভাষায় প্রকাশ কার্যত অসম্ভব। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সমস্ত রকম সুবিধা দিয়েছেন তিনি মেয়েদের। তাই তাঁর এই ঋণ শোধ করতেই ভোটের কাজে ঝাঁপিয়ে পরেছেন তাঁরা। যোগ দিচ্ছেন প্রার্থীদের প্রচারে।
প্রচারে এভাবে সমাজের সবদিকের অংশকে শামিল করে বিরোধীদের কয়েক যোজন পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত–পুরসভা সর্বত্রই মহিলারা এগিয়ে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন, প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির কথা বলছেন, তাতে কীভাবে মানুষ সাহায্য পাচ্ছেন, সেকথা বলছেন। জেলার তৃণমূল শিক্ষক নেতা দেবাশিস নাগ, বিশ্বনাথ সাহারা বলছিলেন, “এবার বহু শিক্ষিকা প্রচারে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে গলা ফাটাচ্ছেন। মাস পয়লা বেতন, সিসিএল–সহ নানা সুযোগ পাওয়ার প্রতিদানেই এইভাবে তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরছেন।”
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপনবাবু আরও বিশ্বাস করেন, মহিলারা রাজনীতিতে যত বেশি আসবেন, ততই রাজনীতির মঙ্গল। সেই বিশ্বাসে ভর করে সুফল মিলেছে পঞ্চায়েত ভোটে। লোকসভা ভোটের মুখে সেই টোটকাই প্রয়োগ করছেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় শুধুই মহিলাদের নিয়ে বৈঠক করছেন। সমস্যার কথা শুনছেন। সমাধানও করছেন। স্বপনবাবুর যুক্তি, একটা সংসারের সুবিধা–অসুবিধা সব থেকে ভাল বোঝেন সংসারের মহিলারা। তাই সমস্যা বুঝতে গেলে মহিলাদের সঙ্গে কথা বললে দ্রুত কাজ হয়।
তিনি আরও জানাচ্ছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশে নজির সৃষ্টি করেছেন, পঞ্চায়েতে মহিলা পদাধিকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে। তিনি ছাড়া মেয়েদের কথা আর কে ভাবেন? তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজসাথী–সহ মেয়েদের জন্য নানা প্রকল্প ও কর্মসূচি”। বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান–উপপ্রধান–সহ বিভিন্ন পদাধিকারীদের কাছ থেকে এলাকার সমস্যার কথা তিনি শোনেন। সমস্যা মেটাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেটাও শোনেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধরে দেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে তাঁদের রুটিরুজির সংস্থানে কোনও গন্ডগোল হচ্ছে কিনা তাও শোনেন। সমস্যা মেটাতে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তা বলে দেন। আর এসবের মাঝে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ভোট বাড়াতে কী কৌশল নিতে হবে, তাও বাতলে দিয়েছেন।
[Total_Soft_Poll id=”6″]
স্বপনবাবুর দাবি, মেয়েরা যত সহজে হেঁসেলে ঢুকতে পারেন, পুরুষরা পারেন না। তাই হেঁসেলের খবর তুলে আনতে মেয়েদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটেও মেয়েরা একই রকমভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃণমূলের ছোট–বড় সভা, মিছিলেও মেয়েরা যোগ দিচ্ছেন। বিজেপি–কে দেশ ছাড়া করতে ঘাস–ফুলের সমর্থনে তাঁরাই বেশি গলা চড়াচ্ছেন। মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “ভোটে দলীয় প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান বাড়াতে সংসার সামলে রাস্তায় নামছেন মহিলারা”। কালনা ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবণী পাল বা কাটোয়া পুরসভার কাউন্সিলার চন্দনা মাজি বলছিলেন, ‘মমতাদি যেভাবে দিন–রাত এক করে ছুটে বেড়াচ্ছেন, তাতে আমরা অনুপ্রাণিত। তাই দলীয় যে কোনও কর্মসূচিতে নেতৃত্বের ডাক পেলেই হাজির হয়ে যাচ্ছি। মানুষকে বলছি দেশ বাঁচাতে মমতাদির হাত শক্ত করতেই হবে”।
পূর্ব বর্ধমান জেলায় ভোটে মহিলাদের প্রচারে নামানোর তৃণমূলের কৌশল নতুন কিছু নয়। এর আগে পঞ্চায়েত ভোটেও বহু জায়গায় ঘাস–ফুলের সমর্থনে প্রচারের ময়দানে নামেন। কাটোয়া মহকুমাতেও এবারের লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমেছেন মহিলারা। কাটোয়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের রাজ্য সহসভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “আসলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মহিলাদের জন্য এত করেছেন যে, আমাদের ভোটের প্রচারে আর মহিলাদের আলাদা করে ডাকতে হচ্ছে না। প্রচারের খবর পেয়েই তারা নিজেরা আগেই এসে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও হাজির হচ্ছেন”।
[Total_Soft_Poll id=”7″]