‘জেট’-এর জট দিন দিন যত বাড়ছে, ততই ছোট হয়ে আসছে তাদের আকাশ। আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা চিঠিতে নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে সংস্থার পাইলট-ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছিলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি যে কোনও মুহূর্তেই এই সংস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’ তাঁদের সেই আশঙ্কাই এবার সত্যি হওয়ার পথে। কারণ মাস কয়েক আগেও আকাশ দখলের জন্য লড়াই করত যে সংস্থার ১১৯টি বিমান, সরকারি ভাবেই তার সংখ্যা নেমে এসেছে ১১টিতে। শুধু তাই নয়। গত বৃহস্পতিবার কলকাতার আকাশে ডানা মেলল না জেট এয়ারওয়েজের কোনও বিমানই। চালু হওয়ার পর থেকে গত ২৫ বছরে এ শহরের উড়ানসূচিতে সব সময় জ্বলজ্বল করেছে ‘এন ডব্লিউ’— জেটের উড়ান কোড। ওইদিন তারও দেখা মেলেনি।
শেষমেশ শুক্রবার বিমান পরিবহণ সচিব পি এস খারোলা মেনেই নিলেন, এই সপ্তাহান্তে মেরেকেটে জেট এয়ারওয়েজের ৬-৭টি বিমান উড়বে দেশের মধ্যে। আর সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সোমবার পর্যন্ত সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করেছে সংস্থাই। সব মিলিয়ে, ক্রমশ আরও গভীর হচ্ছে জেটের সঙ্কট। গতকালও যে কারণে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন উদ্বিগ্ন কর্মীরা। এমনকি মার্চের বেতন এখনও না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠাতা নরেশ গোয়েল, সিইও বিনয় দুবে এবং স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমারের নামে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করার কথা ভাবছে কর্মী ইউনিয়ন।
প্রসঙ্গত, নতুন করে জেটের মালিকানা বা অংশীদারি হাতে নিতে আগ্রহপত্র জমা দেওয়ার সময় ছিল শুক্রবার পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, অন্যতম অংশীদার এতিহাদ, এয়ার কানাডা সমেত কয়েকটি সংস্থা প্রাথমিক ভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে আলোচনার কেন্দ্রে অবশ্যই জেটের ককপিটে নরেশ গোয়েলের ‘ফিরতে চাওয়া’। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, জেটের রাশ ফের হাতে নিতে শুক্রবার আগ্রহপত্র জমা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা এবং হালে ঋণদাতাদের শর্ত মেনে সংস্থার পর্ষদ থেকে সরে দাঁড়ানো গোয়েল। ২৫ মার্চ যখন ডুবতে থাকা জেটের সিংহভাগ শেয়ার স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম হাতে নেয়, তখন নরেশের হাতেই ছিল ৫১ শতাংশ শেয়ার।
কিন্তু ২৫ মার্চের পরে তা কমে হয় ২৬ শতাংশ। ঋণ নিতে যা আবার পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখেছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, তবে কি ওই টাকা জেটের অংশীদারি কেনায় ঢালবেন তিনি? অনেকের প্রশ্ন, ১৬ হাজার কর্মীর চাকরি বাঁচাতে কি ওই টাকা জোগাড়ের জন্য আসলে সময় দেওয়া হল গোয়েলকে? তিনি ফিরে এসে কি সুযোগ পাবেন জলের দরে সংস্থার শেয়ার কেনার? সে ক্ষেত্রে ঘুরপথে জেটের কাঁধে চেপে থাকা ঋণ মকুব হবে বলে আশঙ্কা অনেকের।
তবে এ সবের মধ্যে উদ্বেগ আর ক্ষোভ বাড়ছে কর্মীদের। জেট পাইলটদের সংগঠন ১৫ এপ্রিল থেকে ওড়া বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, জেট চালু রাখতে ১,৫০০ কোটি টাকা ঢালার কথা ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামের। তা আসেনি। পাইলট ও ইঞ্জিনিয়ারদের তিন মাসের বেতন বকেয়া। কর্তৃপক্ষের হেলদোল নেই। এই অবস্থায় সমস্ত পাইলটকে ১৫ এপ্রিল মুম্বইয়ে হাজির হওয়ার ডাক দিয়েছে তারা। অভিযোগ জানাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও গিয়েছিল জেট কর্মী ইউনিয়ন। অন্যদিকে, জানা গেছে, এই মুহূর্তে বাজারে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার দেনা জেট এয়ারওেজের। যে বোঝা ঘাড়ে নিয়ে ওড়া সম্ভব হচ্ছে তাদের একাধিক বিমানের।