মাত্র চোদ্দো মাস আগেই দীর্ঘদিনের বাম দুর্গের পতন ঘটেছে। এই মুহূর্তে রাজ্যের মসনদে বিজেপির বিপ্লব দেব। কিন্তু এক বছর দু’মাস পরেই অদ্ভুত ভাবে বদলে গেছে ত্রিপুরায় গেরুয়া শিবিরের অবস্থা। ইতিমধ্যেই গোটা রাজ্যে বইছে বিজেপি বিরোধী হাওয়া। এরই মধ্যে এখানে উঠে আসছে কংগ্রেস, তৃণমূল। শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত। সীমান্তে বিএসএফর চেকপোস্টের থেকে বড় জোর আড়াইশো মিটার দূরে রাস্তার ওপরই উড়তে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা। শুধু তাই নয়, আছে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় ছবি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রচার গাড়ি। তাতেও মমতা ও দলীয় প্রতীকের ছবি।
রাস্তা থেকে যে সরু গলিটা ঢুকে গিয়েছে একটি বাড়ি পর্যন্ত, তার দু’পাশেও তৃণমূলের পতাকা লাগানো। এই বাড়িতেই থাকেন পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মামুন খান। বাড়ির নীচে নির্বাচনী কার্যালয়। প্রচারের শেষ লগ্নে বাড়িতে ছিলেন না প্রার্থী। ছিলেন তাঁর ভাই ও এক দলীয় সমর্থক। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে প্রার্থী জানালেন, প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি আছেন প্রচারে। শাসক বিজেপির ভীতি প্রদর্শনের জন্য কিছুটা লুকিয়ে-চুরিয়েই প্রচার করতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, অলিতে-গলিতে ঘুরে ‘গেরিলা’ কায়দায় প্রচার চালাচ্ছি।
ত্রিপুরায় দলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন আশিসলাল সিনহা। ত্রিপুরা পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার আগে ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা শচীন্দ্র লাল সিনহার পুত্র তিনি। আশিসবাবুর কথায়, ত্রিপুরায় তাঁদের লড়াই এবার ‘অ্যাসিড টেস্ট’। কারণ দলের শীর্ষনেতাদের থেকে কোনওভাবে সাহায্য না নিয়ে শুধু এখানকার সমর্থক ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে কতটা ভালো ফল করা যায়, সেটা এবার বোঝা যাবে। উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালে বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর ত্রিপুরা নিয়ে সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূল। মু্খ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরায় প্রচারে এসেছিলেন।
শুধু তাই নয়, গত ২০১৪ সালে ত্রিপুরার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ভালো ভোটও পেয়েছিলেন। পশ্চিম কেন্দ্রে এক লক্ষের বেশি। পূর্ব কেন্দ্রে এক লক্ষের কিছুটা কম। তবে এখনও ত্রিপুরার মানুষ মনে করেন তৃণমূলের ভালো সম্ভাবনা আছে। আগরতলার অটোচালক বিমল সাহা যেমন জানান, তৃণমূল এখানে মজবুত হলে ভালো হতো। দিদি তো এখানে এসেছিলেন! মানুষের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছিল। রাজধানী থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে উদয়পুরের বাসিন্দা যুবক বাসুদেব দেবনাথ আবার মনে করেন, দিদির একবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, গত বছর বিধানসভায় ত্রিপুরার ২৩টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল। দলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীরা অনেকেই এসেছিলেন প্রচারে। এবার এখনও পর্যন্ত হুগলীর একজন জেলা পরিষদ সদস্য তাঁর সমর্থনে প্রচারে এসেছেন বলে জানালেন প্রার্থী। বাংলার মন্ত্রী গৌতম দেব, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, সাংসদ শান্তনু সেন সহ আরও অনেক নেতার আসার কথা থাকলেও তা বাতিল হয়ে যায়। প্রার্থীর স্বীকারোক্তি, যেভাবে ভীতি প্রদর্শন চলছে তাতে বাংলা থেকে বড় নেতা কাউকে প্রচারে আনতেও আমিও বিশেষ ভরসা পাইনি।
আর আশিসবাবু জানিয়েছেন, আগরতলার বাইরে সোনামুড়া-সহ বেশ কিছু এলাকায় তাঁরা প্রচার চালিয়েছেন। প্রচারের জন্য গাড়ি পেতে পর্যন্ত সমস্যা হচ্ছে। গাড়ি ভাড়া দিয়েও মালিকরা বিজেপির চাপে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে তাঁর অভিযোগ। তবে প্রার্থী নির্বাচন খুব ভালো হয়েছে। ত্রিপুরায় সংখ্যালঘু মানুষ দুই শতাংশের কম। এখানে প্রথম কোনও দল লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিল। ৩৪ বছরের প্রার্থী মামুন খান, ক্রিকেট খেলোয়াড়। এমকম পাশ করার এই মুহূর্তে সিএ পড়ছেন তিনি। সবমিলিয়ে ত্রিপুরার আগামী দিনে সংগঠনের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মমতার দল। এবারের লোকসভা ভোটকেই পাখির চোখ করছে তারা।