হাতে বাকি আর মাত্র দু’দিন। আগামী ৪৮ ঘন্টা পর দেশজুড়ে শুরু হতে চলেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। কিন্তু তার আগে বিতর্কে খোদ নির্বাচন কমিশনই। হ্যাঁ, নাট্যকার, অভিনেতা, বিজ্ঞানী থেকে সমাজকর্মীদের পর এবার মুখ খুললেন অবসরপ্রাপ্ত আমলারা। প্রথম দফার ভোট শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা চিঠি দিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে। উল্লেখ্য, কমিশনের তরফে বাংলায় পুলিশ-প্রশাসনে রদবদলের নির্দেশ আসতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিজেপির অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করেই অগণতান্ত্রিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এবার প্রাক্তন আমলাদের চিঠিতে মান্যতা পেল তাঁর অভিযোগ।
সোমবার রাষ্ট্রপতিকে লেখা খোলা চিঠিতে প্রাক্তন বিদেশ সচিব শিবশঙ্কর মেনন, বাংলার প্রাক্তন বিশেষ সচিব জি বালাগোপাল ও প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ ভট্টাচার্য, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন আইএএস হর্ষ মন্দের, রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্য সচিব অদিতি মেহেতা-সহ ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলার অভিযোগ, সাধারণ নির্বাচনের দোরগোড়ায় বিজেপির বহু নেতার বিরুদ্ধে একাধিকবার নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠা স্বত্ত্বেও, নির্বাচন কমিশন কড়া পদক্ষেপ নেয়নি। কমিশনের এই দুর্বলতায় তাঁরা চিন্তিত, বলে রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন আমলারা।
[Total_Soft_Poll id=”2″]
তাঁদের অভিযোগ, কমিশনের এই দুর্বলতা প্রশাসনিক বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে লেখা চিঠিতে প্রাক্তন আমলারা বলেছেন, বহু বাধা ও জটিলতা স্বত্ত্বেও দেশে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণে বরাবরই বড় ভূমিকা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বর্তমানে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে। গত ২৭ শে মার্চ ‘এ-স্যাট’ দিয়ে কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংসের খবর জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সাধারণ নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের পরেও, প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হয়নি বলে জানায় কমিশন। যা নিয়ে চিঠিতে উষ্মা প্রকাশ করে আমলারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের দিন ঘোষণার পরও, মোদী বিজ্ঞানীদের সাফল্যকে তাঁর সরকারি সাফল্য বলে প্রচার করতে চেয়েছেন।
এছাড়া, নির্বাচনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর বায়োপিক, ডকুমেন্টরি এবং ওয়েব সিরিজ প্রকাশেও কোনও আপত্তি জানায়নি কমিশন। গত ৩১ শে মার্চ ‘নমো টিভি’ চ্যানেল লঞ্চেও কমিশনের একই নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছে, বলে চিঠিতে অভিযোগ অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কোনও অনুমোদন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি ব্যবহার করে সম্প্রচার শুরু হয় নমো টিভির। চিঠিতে তাঁরা এই অভিযোগও করেন যে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে যেখানে অন্ধ্রপ্রদেশ ও বাংলায় প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্তাদের বদলি করা হয়েছে, তখন বিরোধী দলগুলির বারবার আবেদন সত্ত্বেও, গুটখা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত তামিলনাড়ুর ডিজিপিকে অপসারণ করেনি কমিশন।
একইভাবে, প্রচারে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘মোদীজি সেনা’ বা বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও কড়া পদক্ষেপ করেনি কমিশন, অভিযোগ আমলাদের। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁদের আবেদন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধিকার, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। চিঠিতে ওই ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা জানিয়েছেন, কোনওরকম ভয় বা প্রভাব ছাড়াই মানুষ যাতে তাঁর ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা উচিত কমিশনের। পাশাপাশি, রাজস্থানের রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহকে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে রাজ্যপালের পদ থেকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
[Total_Soft_Poll id=”3″]