বিগত ৮ বছরে সব দিক থেকেই ‘এগিয়ে বাংলা’। গোটা রাজ্যজুড়েই বিছে উন্নয়নের জোয়ার। কিন্তু তারপরেও বাংকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পিড ব্রেকারের সঙ্গে তুলনা করায় এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাল্টা ‘ডিরেলমেন্ট মাস্টার’ বলে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। শুধু তাই নয়। মোদীকে ‘ডিরেলমেন্ট মাস্টার’ তকমা দেওয়ার পাশাপাশি পাঁচ বছরে ভারতের অগ্রগতি লাইনচ্যুত হওয়ার যাবতীয় পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন মমতা সরকারের অর্থমন্ত্রী। সেই সব দাবির স্বপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারেরই অধীনস্থ নানা সংস্থার তথ্য পেশ করে অমিত সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মোদী জমানায় পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতি লাইনচ্যুত হয়েছে। একই সময় সমগ্র দেশের তুলনায় বাংলার রেকর্ড পরিমাণ আর্থিক প্রগতি হয়েছে।
কর্মসংস্থান তৈরি, বেকারত্ব দূরীকরণ, শিল্পবৃদ্ধি- সবেতেই মমতার বাংলা কী ভাবে মোদীর ভারতকে টেক্কা দিয়েছে, তারও অনুপুঙ্খ বিবরণ তথ্য পেশ করা হয়েছে তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠকে।অমিত বলেন, ‘এক্সপায়ারিবাবু মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন স্পিডব্রেকার। ইয়ার্কি হচ্ছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে আমি মোদীকে চ্যালেঞ্জ করছি। আমি বলব, উনি ডিরেলমেন্ট মাস্টার। ট্রেনটা চলছিল লাইনের ওপরে। মোদী সেটাকে লাইনচ্যুত করে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী ৫৫ মাসে ৯২টা দেশ সফর করেছেন। কোথাও আবার একাধিক সফর করেছেন। তাঁর ঘুরে বেড়ানোর জন্য জনসাধারণের টাকা থেকে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২১ কোটি। অথচ, প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কি হয়েছে? ২০১৪ সালে প্রায় তেইশ শতাংশ হারে বাড়ছিল। ২০১৭-তে এফডিআইয়ের হার মাইনাস ১০.২৬ শতাংশ।’
অমিতের দাবি, নোট বাতিলের পর সবার আগে মমতাই প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ ছিল, এতে সাধারণ মানুষ যেমন বিপাকে পড়েছে, তেমনই এর নেপথ্যে বড়সড় দুর্নীতি রয়েছে। মমতার সেই সন্দেহই যেন মান্যতা পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট’ বা এফইইউ এর নথিতে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থাটির সদ্য প্রকাশিত তথ্য বলছে ব্যাঙ্কগুলিতে ১৪ লক্ষ সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘২০১৫-১৬- অর্থবর্ষে দেশের জিডিপি বাড়ছিল ৮ শতাংশ হারে। নির্মম, স্বৈরাচারী নোটবন্দীর জন্য ১৭-১৮ সালে সেটা ৬.৭ শতাংশে নেমে যায়। মোদী বলছেন মেক-ইন-ইন্ডিয়া। শিল্প বাড়ছিল প্রায় দশ শতাংশ হারে। নোটবন্দির ফলে সেই হার ১৭-১৮ অর্থবর্ষে নেমে এল ৫.৯৫ শতাংশে। উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার ২০১৫-১৬ তে ছিল ১৩ শতাংশের উপর। নোটবন্দির পর সেই হার ৫.৯৩ শতাংশ নেমে যায়।’
এফইইউ-এর ডিরেক্টর পঙ্কজ মিশ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানকে হাতিয়ার করে অমিতবাবুর প্রশ্ন, এটা কি কালোকে ধোলাই করে সাদা টাকা করার প্রকল্প ছিল? উল্লেখ্য, তৃণমূল তার নির্বাচনী ইস্তাহারে দিল্লীতে নতুন সরকার হলে নোট বাতিলের নেপথ্যে দুর্নীতির তদন্ত করবে বলে উল্লেখ করেছে। এই বিপুল সংখ্যক সন্দেহজনক লেনদেনের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে এফইইউ। অমিতবাবুর মতে, এখনও মূল তদন্তই শুরু হয়নি। অর্থাৎ কেন্দ্রের শাসক ঘনিষ্ঠরা এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তা চাপা পড়ে যাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি, তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোদী জমানায় ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ২ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১৭-১৮ অর্থবর্ষে বেড়ে হয়েছে ১০ লক্ষ কোটি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া ঋণখেলাপিরা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এই রকম হাজার হাজার মানুষ আছে যারা ঋণ সুদ বা আসল শোধ দিতে পারছে না। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সৎ তাঁরাও আর্থিক বৃদ্ধি, শিল্পবৃদ্ধির হার পড়ে যাওয়ায় ঋণ শোধ করতে পারছেন না। মোদী সরকার জবাব দাও।’ একইসঙ্গে মোদী জমানায় বেকার সমস্যার ‘ভয়াবহ’ রূপ তুলে ধরতে অমিত বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশন্যাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশনই বলছে দেশে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরে সর্বাধিক। ২ কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। সিএমআইইর মতো নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থাও বলেছে, ২০১৮ সালে ১ কোটির উপর কর্মসংস্থান নষ্ট হয়েছে। মোদী সরকার এর জবাব দাও।’
আর বাংলার ছবিটা? অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। গোটা দেশে যখন ২ কোটি চাকরি নষ্ট হয়েছে, এ রাজ্যে ১ কোটি চাকরি তৈরি হয়েছে। আমি বিধানসভাতেও তথ্য দিয়েছি। কেউ বিরোধিতা করেননি। রাজ্যে শিল্পবৃদ্ধির হার ১৬.২৯ শতাংশ।’ আর্থিক বৃদ্ধির হারে গোটা দেশের থেকে বাংলা কতটা এগিয়ে তা বোঝাতে অমিত বলেন, ‘২০১৭-১৮-তে পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৯.১৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ এ ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার একটু বেড়ে ৭.২৩ শতাংশ। গতকালই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বলেছে এটা আরও নীচে নেমে এসে ৭ শতাংশে ঠেকবে। সে জায়গায় বাংলার জিডিপি বাড়ছে প্রায় ১১ শতাংশের উপর।’ মমতার আমলে রাজ্যের পরিকল্পনা খাতে ব্যয় বাম জমানার শেষ বছরের তুলনায় ৬ গুণ বেড়ে ৮৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যা থেকে দেশ এবং বাংলার সার্বিক অগ্রগতির বিরাট ফারাকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে।