গড় জাতীয় উৎপাদন থেকে কর্মসংস্থান, দেশের আর্থিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোটবন্দির প্রভাব যে খুব একটা সুখের নয়, তা নিয়ে একমত অনেক বিশেষজ্ঞই। এবার সামনে এল এক বিস্ফোরক তথ্য। দেশের অন্তত ৮৮ লক্ষ আয়করদাতা নোটবন্দির বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি!
নোটবন্দির ধাক্কায় বেসামাল হয়েছিল দেশের আয়কর দফতরও। সেই বছরেই নাকি দেশের অন্তত ৮৮ লক্ষ আয়করদাতা নোটবন্দির বছরে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা দশ গুণেরও বেশি। অথচ এই বিপুল সংখ্যক আয়করদাতা তার আগের অর্থবর্ষেও নিয়মমাফিক রিটার্ন দাখিল করেছিলেন। দেশের অর্থনীতিতে নোটবন্দির ধাক্কাই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা সামনে এনেছে এই আয়কর দফতরের এই রিপোর্ট। এবং এই তথ্য আবারও প্রমাণ করে দিল মোদীর নোটবন্দীর পদক্ষেপ সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ভারতীয় অর্থনীতিতে নোটবন্দির কুফল কতটা, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই জারি আছে বিতর্ক। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে দেশের গড় জাতীয় উৎপাদন(জিডিপি) বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছিল ৭.১। এই বছরের জানুয়ারিতেই অবশ্য সেই সূচক সংশোধন করে ৮.২ করে কেন্দ্র। জিডিপি-র হারে এই ভাবে পরিবর্তন করার নজির খুব একটা নেই। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, নোটবন্দির ব্যর্থতা ঢাকতেই জোর করে বদলে দেওয়া হচ্ছে জিডিপি বৃদ্ধির হার। এবং দেখা গেছে এই বক্তব্য সম্পূর্ণ সত্যি।
চাঞ্চল্যকর ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ‘স্টপ ফাইলার্স’-এর সংখ্যা প্রায় দশ গুণ বেড়ে গিয়েছে। যাঁরা আগের অর্থবর্ষে আয়কর রিটার্ন জমা দিলেও কোনও একটি নির্দিষ্ট অর্থবর্ষে তা জমা দেন না, তাঁদেরকেই বলা হয় স্টপ ফাইলার্স। সেই সংখ্যাই এক দশকের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে নোটবন্দির বছরে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে যে আয়করদাতারা রিটার্ন জমা দেননি, তাঁদের সংখ্যা ছিল ৮.৫৬ লক্ষ, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮.০৪ লক্ষ, গত এক দশকে এরকমটা হয়নি কখনই।
২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে যখন বাতিল করা হয়েছিল ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট, তখন সেই প্রভাব পড়েছিল দেশের কর্মসংস্থানের উপর। কাজ হারিয়েছিলেন দেশের অসংখ্য মানুষ। কারণ, ভারতীয় বাজারের মোট মুদ্রার ৮৬ শতাংশই ছিল এই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। কর্মসংস্থান ধসে যাওয়ার কারণেই আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়ার সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আয়কর দফতরের এক শীর্ষকর্তা জানিয়েছেন, ‘‘সাধারণত আয়কর দফতরের কর্মী এবং অফিসাররা সক্রিয় না হলে এই স্টপ ফাইলার্সদের সংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে যে হারে বেড়েছে এই সংখ্যা, তাতে আয়কর প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই। অর্থনীতির ওপর কোনও প্রভাব থাকলে তবেই এই ধরনের বিপর্যয় হয়। নোটবন্দির জন্য মানুষের আয় কমে গিয়েছে অথবা বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছেন— এটাও একটা এই সংখ্যাবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে।’’এই রিপোর্ট দেখিয়ে দিল মোদী দেশ চালাতে ঠিক কতটা ব্যর্থ।