দেশের সব সংবাদ মাধ্যমের কাছেই তাঁর ‘মন কি বাত’ বলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিছু বাছাই করা সংবাদ মাধ্যম ছাড়া অন্যান্যদের দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কিছু বাছাই করা প্রশ্নেরই উত্তর দেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে যে সম্পাদক-সঞ্চালককে ঘণ্টা দেড়েকের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তিনি আজ অন্য চ্যানেলে হলেও আজও তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভরসার সাংবাদিক। ভোটের মুখে এবারও তাঁর কাছে ‘মন কি বাত’ বললেন মোদী। একইসঙ্গে নতুন অস্ত্র তুলে দিলেন বিরোধীদের হাতে।
এবার দেশপ্রেম নিয়ে তাঁর বাগাড়ম্বর, বালাকোটে বায়ুসেনার হানায় কীভাবে অতন্দ্র ছিলেন, বলতে বলতে এক জায়গায় তিনি বলে ফেললেন, ‘অভিনন্দনের ঘটনা যখন ঘটল, সব দলের এককাট্টা হয়ে বলার কথা ছিল, বায়ুসেনা এফ–১৬ বিমান গুলি করে নামিয়েছে। আমরা ওদের জন্য গর্বিত। তা না করে অভিনন্দন কবে ফিরবেন, তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!’ তাঁর এহেন মন্তব্যের পরেই শোরগোল পড়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। নেটিজেনদের প্রতিক্রিয়া: উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান না ফিরলেই কি খুশি হতেন মোদী? তাতে নির্বাচনের মুখে আরও গরম রাজনীতি করা যেত বলে!
‘রিপাবলিক ভারত’কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র, রাফাল থেকে বেকারত্বের মতো বিষয় ছুঁয়েছেন মোদী। বিরোধী জোটের সামনে বিজেপির সম্ভাবনা কতটা তা নিয়েও মুখ খুলেছেন। পরিবারতন্ত্র নিয়ে তাঁর কৌশলী মন্তব্য, ‘ওতে আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নেই। তবে তা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।’ অবধারিত প্রশ্ন ছিল, ২০১৯-এ এগিয়ে কে? যথাসম্ভব আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ দিতে গিয়ে মোদীর জবাব, ‘বুঝি, আপনাদের টিআরপির কথা মাথায় রাখতে হয়। ভারত–পাকিস্তান মুখোমুখি না হলে যেমন ক্রিকেট জমে না, তেমনই লোকসভা নির্বাচনের মুখে দু’তিন জন জোরালো নাম দরকার।’
এরপরই তাঁর উপচে পড়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৪-তে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, রাহুল গান্ধীকে তুলে ধরা হয়েছিল। ওঁরা দু’জনেই ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এবার মোদীর সামনে কেউ নেই। কারণ যে–জনতা ৩০ বছরের দুর্দশা সয়েছেন, তাঁদের গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। ওই ৩০ বছর আর ৫ বছরের পার্থক্য তাঁরা বোঝেন। সুতরাং কাকে ভোট দিতে হবে, তা–ও জানেন। জনগণ যদি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলে আমাদের সরাবে কে? অবশ্য ২০২৪-এ কে ক্ষমতার দখল নেবেন, তা এখনই বলা কঠিন।’
২ কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতা নিয়ে বিরোধীরা অভিযোগ করেন। সাক্ষাৎকারে মোদীর সাফাই, পরিসংখ্যান ছাড়াই নাকি কর্মসংস্থান নিয়ে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। পুলওয়ামা জঙ্গী হামলার সময়ে শুটিংয়ে ছিলেন? মোদী জানিয়েছেন, ‘ছিলাম। কারণ সেখানে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। হামলার খবর পেয়ে ফোনেই যোগাযোগ রেখেছি। বক্তৃতাও দিয়েছি ফোনে।’ শৌখিনতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অহরহ খোঁচা খেতে হয়। কংগ্রেস যেমন বলেছে, তাঁর নাকি ২৫০ জোড়া পোশাক আছে! উত্তরে মোদী জানান, কংগ্রেসের এই অভিযোগের কথা তাঁর জানা। সেইসঙ্গে ওই অভিযোগকে একেবারেই ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি।