দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে চলা বামেদের অপশাসনের ফলে যে ক্ষোভ জমেছিল, ভোট চাইতে আসা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদের কাছে তা উগড়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রের ভোটাররা। এরপরই প্রচারে বেড়িয়ে তাঁর হওয়া অভিজ্ঞতার কথা, মানুষের কাছে যা প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন তিনি, তার এক রকম নির্যাস ফেসবুকে লিখেছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক। সেখানে ছিল বামেদের সম্পর্কে মানুষের সমালোচনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। যার ফলে সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। আসতে থাকে নানা রকম মন্তব্য। যার ফলে চাপে পড়ে, লেখার সেই অংশ শেষমেশ পাল্টে দেন সাইদুল।
নেটিজেনদের কটাক্ষ তো ছিলই, তার ওপর বিষয়টি সামনে আসতেই বামেদের বিঁধতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘সিপিএম নেতাদের দম্ভ ও উন্নাসিকতা মানুষ ভুলতে পারবেন না। ভুল করে মাঝে-মাঝে ওঁদের কেউ সে কথা স্বীকার করে ফেললেও তার পরেই ভোল পাল্টান।’ যদিও অস্বস্তিতে পড়ে সাইদুল এই সাফাই গেয়েছেন যে, ‘বিভ্রান্তি’ এড়াতেই নাকি তিনি লেখার ওই ‘নির্দিষ্ট’ অংশ পাল্টে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, সাইদুল হককে এ বার দলীয় ভাবে গলসি ১ ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় ভোটের কাজকর্মের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মন্তেশ্বর ও মেমারি ২ এলাকায় প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ২৬ মার্চ তাঁর নেতৃত্বে মোটরবাইকে দলের জনা দশেক কর্মী পারাজ স্টেশন থেকে গলিগ্রাম পর্যন্ত চালকল ও অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে অনুদান সংগ্রহে বেরোন। বিকেলে কর্মীসভা করেন তাঁরা। বাড়ি ফিরে রাত ৮টা নাগাদ তাঁর সারা দিনের কাজের অভিজ্ঞতা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন প্রাক্তন সাংসদ। সেখানে লেখেন বাজারের দুরবস্থা, এলাকার অশান্তির মতো নানা অভিযোগ তাঁদের কাছে করেছেন মানুষ। অনেক মানুষই আবার ‘আপনাদের দলের কিছু মুখকে সামনে না আনাই ভাল’, এমন কথাও বলেছেন বলে উল্লেখ করেন। এরপরেই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। পোস্টটি চোখে পড়া মাত্রই নেটিজেনদের তরফে নানা মন্তব্য ও কটাক্ষ উড়ে আসতে থাকে তাঁর ওই পোস্টে।
এরই মধ্যে কেউ সে সব ‘মুখের’ নাম প্রকাশের আর্জি জানান, কেউ আবার বলেন, এসব কথা ফেসবুকে লেখার বিষয় নয়। তাঁরা এই বিষয়টি চেপে যাওয়ার কথাও বলেন। এমনকি দলের ভিতরে এ নিয়ে আলোচনার পরামর্শও আসে। এ হেন বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই বুধবার দুপুরে তড়িঘড়ি পোস্টটি এডিট করে দেন সাইদুল। যে অংশটি নিয়ে বিতর্ক, সেটি পাল্টে লেখেন, ‘আমি-সহ আমাদের কয়েক জন সম্পর্কে কিছু প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছে’। শুধু তাই নয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে আরও কিছু অংশ বদল করেন তিনি। গতকাল রাত পর্যন্ত দেখা গেছে—‘আপনাদের কেবল মিটিং আর মিটিং আর ভাষণ বেশি হচ্ছে’ বা ‘তৃণদের হাত থেকে বাঁচতে বিজেপির দিকে ঝোঁক বাড়ছে’র মতো কিছু মন্তব্য।
সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশের মতে, ভাষা অদল-বদল করলেও সিপিএম সম্পর্কে মানুষের কী মনোভাব, তা এক রকম ওই পোস্টে রেখেই দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ। এতে ওই সকল অভিযোগকে একপ্রকার মান্যতাই দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে ভোটের মুখে আরও বেকায়দায় পড়তে পারে দল।