প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ‘দেশের চৌকিদার’ বলে দাবি করলেও, বিরোধীরা বারবারই বলে এসেছে, মোদী হলেন আম্বানি-আদানিদের মতো ধনীদের চৌকিদার। দেশের গরীবদের নয়। বিরোধীদের এই দাবি আবারও মান্যতা পেল আজ। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হল আদতে বেলজিয়ামের বাসিন্দা, প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ-কে। যিনি দীর্ঘদিন ভারতের গরিব মানুষের খাদ্যের অধিকার নিয়ে লড়াই করছেন। এদিন তাঁকে গ্রেফতার করে ঝাড়খণ্ড পুলিশ। যদিও গ্রেফতারির কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের গুমলা এলাকায় স্থানীয় মানুষদের নিয়ে একটি সভা করছিলেন জঁ দ্রেজ। সভায় উপস্থিত মানুষদের খাদ্যের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করছিলেন। খাদ্যসুরক্ষার দাবি নিয়ে কণ্ঠস্বর স্পষ্ট করার কথা বলছিলেন তিনি। গ্রেফতারির কোনও স্পষ্ট কারণ না দেখিয়েই সেই সভা চলাকালীন তাঁকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ এসে জঁ দ্রেজের কাছে দাবি করে এমন একটি বন্ডে সই করে দেওয়ার, যাতে লেখা ছিল, ভারতীয় সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই তাঁর। সেই বন্ডে সই করতে রাজি না হওয়াতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শেষ কয়েক বছরে ‘মোদী-সমালোচক’ হিসেবে নানা মহলে পরিচিতি পান দ্রেজ। সেই কারণেই এই গ্রেফতারি, বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদদের একাংশ।
প্রসঙ্গত, ইউপিএ-এর ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের অংশ এই অর্থনীতিবিদ, জঁ দ্রেজ। দিল্লী স্কুল অফ ইকনমিক্স ও রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়েও অর্থনীতি পড়ান তিনি। যদিও পেশার বাইরে বেশির ভাগ সময়টাই তিনি কাজ করেন প্রান্তিক মানুষগুলির জন্য। পশ্চিম ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকার শ্রমিকদের খাদ্যের অধিকার নিয়ে বারবারই সরব হয়েছেন দ্রেজ। শুধু তাই নয়। মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট সংক্ষেপে ‘মনরেগা’ প্রকল্পের প্রাথমিক ড্রাফ্টও তৈরি হয়েছিল দ্রেজের হাতেই। এই প্রকল্পের অধীনেই বহু গরিব চাষি ঋণ নিতে পারে।
গ্রামের প্রান্তিক মানুষের উন্নতিকল্পে নিজে একটানা কাজ করে চলেছেন তিনি। কয়েক দশক ধরে একটানা কাজ করে অর্জন করেছেন ভারতীয় নাগরিকত্বও। গ্রামে, বিভিন্ন বস্তিতে দীর্ঘ সময় থেকেছেন। মানুষগুলির সমস্যা বুঝেছেন জঁ দ্রেজ। সেই মানুষটিকেই কেন গ্রেফতার হতে হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। মানবাধিকার কর্মী যোগেন্দ্র যাদব ট্যুইট করেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। জঁ দ্রেজ একজন বিরাট অর্থনীতিবিদ, নোবেল পাওয়ার যোগ্য। অন্যান্য অনেক অর্থনীতিবিদদের তুলনায় তিনি ভারতের গরিব মানুষের খাদ্য সুরক্ষার জন্য অনেক বেশি কাজ করে চলেছেন তিনি। তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বও পেয়েছেন। সেই মানুষটিকে গ্রেফতার হতে হল, এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কিছু নেই।’
ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গেও বহু কাজ করেছেন জঁ দ্রেজ। তাঁর ও অমর্ত্য সেনের যুগ্ম ভাবে লিখিত বই ‘অ্যান আনসার্টন গ্লোরি: ইন্ডিয়া ইটস কন্ট্রাডিকশনস’-এর বাংলা অনুবাদও প্রকাশিত হয়। অনুদিত বইটির নাম ‘ভারত উন্নয়ন ও বঞ্চনা’। বইটিতে বারবার উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের অধৈর্য হওয়ার কথা, দুর্নীতির বিরোধিতার কথা। দ্রেজ ও সেনের এই বইয়ে দিল্লীর নির্ভয়া কাণ্ডের কথাও ছিল। ভারতে মেয়েদের নিরাপদ চলাফেরা যে সমস্যা, তা নিয়ে জনপরিসরে বিতর্ক ও আইন তৈরি হয়। শুধু নির্ভয়া কাণ্ডই নয়। দেশের আরও নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিরুদ্ধে বারবার সরব হওয়ায় এর আগেও একাধিক বার হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।