প্রার্থী বাছাই নিয়ে যতই দলের অন্দরে গোষ্ঠীকোন্দল হোক বা বর্ষীয়ান নেতারা মনক্ষুণ্ণ হোন না কেন, দলের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবার খুব বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে না মোদী-শাহেরা৷ দলের একাংশেরই প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতির ওপর চাপা ক্ষোভ রয়েছে বুঝতে পেরে এবার আর কোনও মোদী বিরোধীকে ভোটের টিকিট দিচ্ছে না বিজেপি।
প্রসঙ্গত, খুব বেশি প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে এমনও নয়৷ তা সত্ত্বেও যাঁদেরই নাম বাদ পড়ছে, তাঁদের অনেকেই বিক্ষুব্ধদের দলে নাম লেখাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার দলের সভা বা রোড শোতেই ক্ষোভ জানাচ্ছেন৷ যেমন, উত্তরপ্রদেশের হরদোইতে প্রার্থী হতে না পারার পরই অংশুল শর্মা সোজা অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন৷
জানা গেছে, তিনি তার আগে মঙ্গলবার প্রদেশ বিজেপি অফিসে চৌকিদারের হাতে নিজের পদত্যাগপত্র তুলে দিয়ে আসেন৷ দলের সব নেতা যখন নিজের নামের আগে চৌকিদার লাগিয়ে দিয়েছেন এই অবস্থায় আসল চৌকিদারকে সম্মান জানাতে এবং টিভি-র যুগে প্রচার পাওয়ার পাক্কা বন্দোবস্ত করে দল ছেড়েছেন এই সাংসদ৷
রাজস্থানের অবস্থাও ভালো নয়৷ প্রথম তালিকায় ১৬ জন সাংসদের মধ্যে মাত্র দুজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে৷ তাতেও বিক্ষোভ সামাল দেওয়া যায়নি৷ জয়পুরের প্রার্থী রামচন্দ্র বোহরার রোড শো-র মধ্যেই প্রাক্তন বিধায়ক কৈলাশ ভার্মা বিক্ষোভ জানাতে থাকেন৷ তাঁর সমর্থকরা বোহরার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন৷
একই ঘটনা ঘটেছে সিকরের সাংসদ শুদ্ধানন্দ সরস্বতীর ক্ষেত্রেও৷ তবে এরই মধ্যে যে বিষয় নিয়েও বিজেপির অন্দরে-বাইরে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা হল গতবার নরেন্দ্র মোদীর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণার সময় ও তারপরে যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁদের সবাই বাদ পড়েছেন৷ সেই তালিকায় আডবানী, যোশি-সহ অনেকেই আছেন৷
গোয়ায় জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হয়েছিল৷ সেই বৈঠক বয়কট করেছিলেন আডবানী৷ শুধু তাই নয়। বিজেপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠক থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি৷ পরে মোদী-সহ অন্য নেতারা গিয়ে তাঁকে বোঝান৷ এবং পার্লামেন্টারি বোর্ড সেই ইস্তফা খারিজ করে৷
সে সময় মুরলী মনোহর যোশি, শান্তা কুমার, যশবন্ত সিনহারাও এই প্রস্তাবের বিরোধী ছিলেন৷ ৫ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আর কেউই প্রার্থী নন৷ ভোটের ময়দান থেকে তাঁদের সরে যেতে হয়েছে৷ এমনকি অনন্ত কুমারের স্ত্রী তেজস্বিনীকেও এবার বেঙ্গালুরুতে প্রার্থী করা হয়নি৷ তা নিয়েও অনেকেই বিস্মিত৷ প্রশ্ন উঠছে, অনন্তকুমারের আডবানী-ঘনিষ্ঠতার জন্যই কি এই সিদ্ধান্ত?
অন্যদিকে, বিহারের সাংসদ ও মন্ত্রী গিরিরাজ সিংকেও এবার ঠেলে দেওয়া হয়েছে বেগুসরাইতে৷ তাঁর কেন্দ্রটি দেওয়া হয়েছে জেডিইউ-কে৷ প্রবল ক্ষুব্ধ গিরিরাজ নতুন কেন্দ্র থেকে লড়তে চাননি৷ কিন্তু অমিত শাহ টুইট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বেগুসরাই থেকেই তাঁকে লড়তে হবে৷ উল্লেখ্য, ওই কেন্দ্র থেকেই লড়ছেন সিপিআইয়ের যুব নেতা কানহাইয়া কুমার৷ তিনিও ভূমিহার নেতা৷ গিরিরাজও ভূমিহার৷ জানা গেছে, কানহাইয়া বেগুসরাইতে বেশ জনপ্রিয়৷ সেজন্যই গিরিরাজ বেগুসরাইতে লড়তে চাননি৷