‘মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে যেমন টেস্ট পরীক্ষায় বসতে হয়, তেমনই এবারের ভোটে বিরোধীদের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলির কর্মীদের কাছে সেমিফাইনাল। এই পরীক্ষায় দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আগামী বছর ওই ওয়ার্ডও দখলে আনার টার্গেট নেওয়া হয়েছে।’ আগামী বছর হতে চলা পুরভোটকে ফাইনাল ও এবারের লোকসভা নির্বাচনকে সেমিফাইনাল ধরে নিয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে এবার এই বার্তাই দিলেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্য তৃণমূল পুরদলের সভাপতি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
লোকসভা ভোটে শুধুমাত্র দলীয় কাউন্সিলরদের এলাকা নয়, বিরোধীদের দখলে থাকা কলকাতার ২২টি ওয়ার্ড থেকেও দলের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনারই টার্গেট নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আর
বিরোধীদের দখলে থাকা ওয়ার্ডগুলি যে ব্লক সভাপতির নেতৃত্বে জিতবে, তাঁর যে আগামী পুরভোটে টিকিট পাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে, সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন মেয়র। উল্টো দিকে, দলীয় কাউন্সিলরদের কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে পুরমন্ত্রী এ-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন, যাঁর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী জিতবে না, তাঁর আগামী পৌরসভা ভোটে টিকিট পাওয়া কঠিন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কলকাতায় সাতটি ওয়ার্ড বিরোধীদের দখলে। এর মধ্যে কসবায় ৯১ ও ৯২, বেহালা পশ্চিমে ১২৭ ও ১২৮, ভবানীপুরে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড বামেদের দখলে। এছাড়াও রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রে ৮৬ ও ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড বিজেপির দখলে। এই সাতটি ওয়ার্ডে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে প্রচারে নেমেছেন তৃণমূল প্রার্থী তথা কলকাতার পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায়। তিনিও বিরোধীদের ওয়ার্ডে গিয়ে বলছেন, ‘এবারের লোকসভা ভোট এই ওয়ার্ডের
সেমিফাইনাল। আগামী বছরের পুরভোটটা ফাইনালে। তাই এবার জিততেই হবে।’
যদিও বাম ও বিজেপি প্রার্থীরা নিজেদের দখলে রাখা ওয়ার্ডগুলি থেকে আগের চেয়ে মার্জিন বাড়িয়ে পাশের তৃণমূলের কাউন্সিলরের এলাকায় নজর দিচ্ছেন। একইভাবে উত্তর কলকাতায় বিজেপিরবতিন ওয়ার্ড এবং বামেদের আটটি
ওয়ার্ডকে টার্গেট করে প্রচারে নেমে পড়েছেন দীর্ঘদিনের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের দুটি ওয়ার্ড বামেদের দখলে, সেই দুই এলাকা থেকেও এবার সংসদীয় নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে লিড দিতে চান মন্ত্রী শশী পাঁজা। একইভাবে অবাঙালিপ্রধান এলাকা হলেও বিধায়ক তহবিল ও সাংসদের উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি সরকারের নানা প্রকল্প পৌঁছে দিয়ে বিরোধীদের দখলে থাকা চারটি ওয়ার্ডে নিজেদের গড় তৈরি করতে চান বিধায়ক স্মিতা বক্সি। এই চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটিতে বিজেপির কাউন্সিলর ও
একটিতে বামপন্থীরা ক্ষমতায়।
কোমর বেঁধে উত্তর কলকাতায় ওয়ার্ডের পর ওয়ার্ড চষে ফেলছেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ থেকে শুরু করে মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার, বরাে চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউতরা। স্বয়ং মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়ে দিয়েছেন, ‘বিরোধীদের দখলে থাকা ২২টি ওয়ার্ড থেকে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর দায়িত্ব বিধায়কের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বরাে চেয়ারম্যান এবং মেয়র পারিষদদের। ব্লক সভাপতিরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছেন বিরোধীদের ওয়ার্ড থেকে নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে।’