২০০৫ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অ্যাসিড অ্যাটাকের শিকার হন লক্ষ্মী। বয়সে প্রায় দ্বিগুণ, গুড্ডা নামের এক ব্যক্তি কুপ্রস্তাবে সাড়া না পেয়ে, ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য লক্ষ্মীর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছিলেন। কেবল মুখ নয়, বিকৃত হয়ে গিয়েছিল লক্ষ্মীর দেহের আরও অনেক অংশ। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কিশোরী শরীরে চলেছিল অসংখ্য কাটা-ছেঁড়া। হয়েছিল বহু জটিল অস্ত্রোপচার। তাঁর কাহিনীই এবার উঠে আসছে সেলুলয়েডের পর্দায়। দীপিকা পাড়ুকোন অভিনয় করবেন অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের চরিত্রে। ‘ছপক’ নামের সেই ছবির পরিচালক মেঘনা গুলজার।
চোখধাঁধানো আলো কিংবা পেলব মেকআপ নয়, বরং ঝলসে-কুঁচকে যাওয়া তামাটে চামড়াই এ বার দীপিকার সঙ্গী। নেই মাস্কারা লাগানো চোখের পাতা কিংবা নিখুঁত করে আঁকা ভ্রূ-পল্লবও। তবে চোখের চাউনি বড় উজ্জ্বল, বড় দৃপ্ত। আর সারা মুখে লেগে রয়েছে পরিচিত চওড়া হাসি। কে এ এন্টারটেনমেন্টের ব্যানারে এই ছবি আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি মুক্তি পেতে চলেছে। তার আগে মুক্তি পেল ছবিতে দীপিকার ফার্স্টলুক।সোশ্যাল মিডিয়াতে এক নিমেষে ভাইরাল সেই ছবি।
লক্ষ্মীর ভূমিকায় অভিনয় নিঃসন্দেহে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জিং বিষয় দীপিকার কেরিয়ারে। গুলজার কন্যা মেঘনা গুলজার পরিচালিত এই ছবিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে চলেছেন বিক্রান্তে মেসে।’লুটেরা’ ছবিতে বিক্রান্তকে দেখা গিয়েছিল দীপিকার স্বামী রণবীর সিং-এর সঙ্গে। এবার রণবীর ঘরনী দীপিকার সঙ্গে জুটি বাঁধতে চলেছেন বিক্রান্ত।
ওই ঘটনার পরে প্রথমটায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন লক্ষ্মী। আয়নায় নিজেকে দেখতেও ভয় পেতেন তিনি। তবে নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ান তিনি। আইনের সাহায্যে শাস্তি দেন অপরাধীদের। খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের হাতে যেন কোনও ভাবেই অ্যাসিড না পৌঁছোয় সেই ক্ষেত্রেও বিপুল পরিবর্তন এনেছে লক্ষ্মীর এই ঘটনা। ভারতে ‘স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাক’ ক্যাম্পেনের প্রধান মুখও এই লক্ষ্মীই। লড়াই করে জিতে নিয়েছেন সব প্রতিকূলতা। জিতেছেন সামাজিক ট্যাবুগুলোও। বিয়ে করেছেন ভালবেসে, জন্ম দিয়েছেন সন্তানের। হার না-মানার এক জ্বলন্ত উদাহরণ আজ তিনি। অনেক মানুষের আদর্শ।
তবে লক্ষ্মী কিন্তু মোটেই একা নন। সারা দেশে অসংখ্য অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভার বেঁচে আছেন বহু যন্ত্রণা নিয়ে। জয়নগরের বাসিন্দা মনীষা বছর দুয়েক আগে অ্যাসিডে ঝলসে যান তাঁর প্রতিবেশী এক যুবকের হাতে। শত লড়াই শেষে মনীষার মনের জোরের কাছে হার মেনেছে বাধারা। তিনি গলা উঁচু করে বলেছেন, ‘আমি মুখ ঢাকব না।’ তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, অ্যাসিড শুধু চামড়া পোড়াতে পারে, স্বপ্ন নয়। দীপিকার নতুন ছবি প্রসঙ্গে মনীষা বলছেন, “লক্ষ্মীর গল্প সিনেমার মধ্যে দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছবে, এর চেয়ে ভাল কিছু হয় না।” এই সমস্যা নিয়ে যে এত বড় কাজ হচ্ছে, এত মানুষ জানছেন, পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা নিয়ে রীতিমতো আশাবাদী মনীষা।
দীপিকা আগেই জানিয়েছিলেন, মেঘনার কাছে ছবির স্ক্রিপ্ট শুনে হ্যাঁ বলতে সময় নেননি তিনি। বলেছিলেন, লক্ষ্মীর জীবনের গল্প ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছিল তাঁকে। আর অ্যাসিড সারভাইভার লক্ষ্মীর চরিত্রে তাঁর ফার্স্ট লুক প্রকাশ পেতেই দীপিকা জানালেন, “এই চরিত্র আজীবন আমার হৃদয়ে থাকবে।” প্রসঙ্গত, ছবিতে দীপিকার চরিত্রের নাম মালতী। পরিচালক মেঘনার কথায়, “মালতী আশার প্রতীক, উৎসাহের প্রতীক।“