‘সোনিয়া গান্ধী যেমন ইতালির নাচিয়ে ছিলেন, তাঁকে রাজীব গান্ধী বিয়ে করে এনেছিলেন। স্বপ্না চৌধুরিও সোনিয়ার মতোই নাচিয়ে, তাঁকেই বিয়ে করা উচিত রাহুলের। এতে পরম্পরা বজায় থাকবে। একই পেশার সুবাদে মিলেমিশে থাকবেন শাশুড়ি-বউমা।’ ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীর উদ্দেশ্যে এমনই কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন দলীয় বিধায়কের। এর জেরে ক্রমশই অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। বার বার এই ধরনের ঘটনায় শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনায় সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষও। কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা।
প্রাক্তন বিগ বস প্রতিযোগী ও হরিয়ানার নৃত্যশিল্পী স্বপ্না চৌধুরি কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বলে সম্প্রতি খবর চাউর হয়। তা নিয়ে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ স্বপ্নার সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর তুলনা করে বসেন। শুধু তাই নয়। যোগী রাজ্যের বিধায়ক আরও বলেন যে, মোদীর মতো চরিত্রবান এবং সৎ রাজনীতিকের দল কখনই স্বপ্নার মতো কোনও নাচিয়েকে দলে জায়গা দেবে না। রাহুল গান্ধী হয়তো নেতাদের ওপর আস্থা হারিয়ে এখন নাচিয়েদের ওপর ভরসা রাখছেন। তাঁর এই কটূক্তির পর শুধু কংগ্রেসেই নয় দেশের সব কটি রাজনৈতিক দলের তরফেই তীব্র সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে।
আম আদমি পার্টির জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভা সাংসদ সঞ্জয় সিংহ টুইটারে লেখেন, ‘যে দলের নেতা মহিলাদের নিয়ে এমন মন্তব্য করেন, তাদের ভোট দেবেন আপনারা? সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বিরোধ থাকলে ভোটে জিতে জবাব দিন। তা না করে গালিগালাজ করছেন কেন? স্বপ্না চৌধুরী আর যাই করুন না কেন, রাফালে চুক্তিতে দালালি করে দেশ তো আর বেচে দেননি!’ আবার জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রধান মেহবুবা মুফতি টুইটারে লেখেন, ‘অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য। এই ধরনের নোংরা মানসিকতা ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে বিশেষ ধরনের ফিনাইল প্রয়োজন। কিন্তু শাসকদলের কোনও বিধায়ক যখন এতটা স্পর্ধা দেখান, এই ধরনের নোংরা মন্তব্য করেন, বুঝতে হবে শীর্ষ নেতৃত্বেরও সমর্থন রয়েছে এতে। এই মুহূর্তে অসংবেদনশীল, নারীবিদ্বেষী রাজনীতি চলছে দেশে। যেখানে ব্যক্তিগত আক্রমণে কোনও বাধা নেই।’
সুরেন্দ্র সিংহের মতো নেতাদের দেশের শাসনকার্যে নিযুক্ত হওয়া নিয়েও টুইটারে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় নেটিজেনদের অনেককে। কেউ কেউ বলেন, ‘মহিলাদের প্রতি এমন ব্যবহার বিজেপির! ভাবতে অবাক লাগে যে, এই নেতারা দেশের সংসদ পর্যন্ত পৌঁছে যান।’ অবিলম্বে সুরেন্দ্র সিংহকে পদত্যাগ করতে হবে বলেও দাবি তোলেন অনেকে। তবে এই প্রথমবার নয়। অশালীন মন্তব্য করে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন সুরেন্দ্র সিংহ। মাস দুয়েক আগেই সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে ‘রাবণ’ এবং তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ‘শূর্পনখা’ বলে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়। দেশে হিন্দু জনসংখ্যা বাড়াতে নাগরিকদের কমপক্ষে পাঁচ সন্তান ধারণ করার পরামর্শ দিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি।
আবার, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মেলানোয়, গত জানুয়ারি মাসে মায়াবতীর বিরুদ্ধে নারীদের সম্মানহানি করার অভিযোগ তোলেন তিনি। মায়াবতী সম্পর্কে দলীয় সহকর্মী সাধনা সিংয়ের করা এক বিতর্কিত উক্তিকেও সমর্থন করেছিলেন সুরেন্দ্র৷ সাধনা বলেছিলেন, বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী একজন রূপান্তরকামীর থেকেও ঘৃণ্য৷ সেই মন্তব্যের সমর্থনে সুরেন্দ্র বলেছিলেন ‘খুব একটা ভুল বলেননি সাধনা সিং৷ যে কোনও আত্মসম্মানহীন মানুষই রূপান্তরকামী৷’ এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমালোচনা করায় সম্প্রতি বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন তিনি। চুলে কলপ লাগিয়ে মায়াবতী যুবতী সাজার চেষ্টা করছেন বলে কটাক্ষ করেন।
তবে এতকিছুর পরও, এখনও পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি বিজেপি। আর সুরেন্দ্র-ও যে পূর্বের ঘটনাগুলি থেকে বিন্দুমাত্রও শিক্ষা নেননি, রবিবারই তা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার কথা যদিও ইতিমধ্যেই অস্বীকার করেছেন স্বপ্না। যার পর বিজেপি সাংসদ তথা ভোজপুরি অভিনেতা মনোজ তিওয়ারির সঙ্গেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে সুরেন্দ্র সিংহের মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন তিনি বলেন, ‘রাহুল গান্ধী আমার দাদার মতো। বিজেপি নেতার ওই মন্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অসম্মানজনক।’ এ ধরনের মন্তব্য করে নারী জাতিকে অপমান করাই বিজেপির সংস্কৃতি কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিল্পী।