হোলি মানেই রঙের উৎসব। তবে এবার উৎসবের রঙে মিলে গেল রক্তের লালও। হোলির দিন রাস্তায় চলছিল ক্রিকেট খেলা। সেটাই ছিল বড় ‘দোষ’। যার ‘শাস্তি’ স্বরূপ গুরুগ্রামে আক্রান্ত হল এক মুসলিম পরিবার। ২৫ থেকে ৪০ জন যুবকের একটি দল ওই মুসলিম পরিবার এবং তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয়দের বেধড়ক মারল। লোহার রড, জলের পাইপ, হকি স্টিক দিয়ে মার– বাদ ছিল না কিছুই।
ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির নাম মহম্মদ সাজিদ। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা এই ব্যক্তি গত তিন বছর ধরে স্ত্রী সামিনা এবং ছয় সন্তানকে নিয়ে গুরুগ্রামে বসবাস করছিলেন। ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাঁর ভাইপো দিলশাদ এবং তাঁর কয়েকজন বন্ধু বাড়ির সামনের ফাঁকা রাস্তায় ক্রিকেট খেলছিলেন। এরপরই এক দল যুবক এসে তাঁদের বেধড়ক মারে।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে দিলশাদ বলেন, ‘আমরা তখন ক্রিকেট খেলছিলাম। আচমকা দু’জন যুবক বাইকে করে সেখানে আসে এবং বলে, এখানে কী করছিস? পাকিস্তানে গিয়ে ক্রিকেট খেল। এরপরই আমার কাকা সাজিদ সেখানে আসেন। তিনি বচসা থামানোর চেষ্টা করলে, বাইকের পিছনে বসে থাকা যুবক নেমে এসে তাঁকে চড় মারে। সেই সঙ্গে বলে, দাঁড়া আমরা দেখাচ্ছি কী করতে পারি। এরপর ১০ মিনিট পর দু’টি বাইকে আরও ছ’জন যুবক আসে। তাঁদের সঙ্গে আরও অনেককে পায়ে হেঁটে আসতে দেখে আমরা ভয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে যাই।’
এখানেই শেষ নয়। দিলশাদ জানান, ‘আমাদের বাড়ির ভিতর ঢুকে যেতে দেখে, ভিড়ের মধ্যে থেকে অনেকে চিৎকার করে বাইরে আসতে বলে। কিন্তু আমরা বাইরে না বেরোনোয় ওরাই জোর করে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। কারোর হাতে হকি স্টিক ছিল, কারোর হতে ছিল লোহার রড। এই দিয়েই ওরা আমাদের বাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে। আমাদের প্রত্যেককে বেধড়ক মারধর করে। লোহার রড, বাঁশ, বল্লম, তলোয়ার, হকি স্টিক কোনও কিছুই বাদ যায়নি। এরপর বাড়ির দামী জিনিসপত্র লুঠ করে পালিয়ে যায়।’
দিলশাদের কথায়, ‘এই সময় পুলিশকে ফোন করেও কোনও সুরাহা হয়নি। পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হুমকি দেয়, বাড়ি ছেড়ে চলে যাও নাহলে আমরা বাড়িতে জবরদখল করব।’ ঘটনা প্রসঙ্গে সাজিদের স্ত্রী সামিনা বলেন, ‘আমি ওই সময় রান্নাঘরে ছিলাম। আচমকাই বেশ কয়েকজন বাড়ির ভেতর ঢুকে সবাইকে বেধড়ক মারতে শুরু করে। আমি বারবার মিনতি করলেও ওরা আমার কথা শোনেনি। ওরা জানলা-দরজা, গাড়ি এবং বাড়ির মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। এরপর বেশ কিছু সোনার গয়না এবং ২৫ হাজার নগদ টাকা চুরি করে চলে যায়।’
গোটা ঘটনাটির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৪৮, ১৪৯, ৩০৭, ৩২৩, ৪২৭, ৪৫২ এবং ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ভিডিও দেখে ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে ছয়জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। বাকিদের খোঁজেও জোর তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।