হাতে আর মাত্র তিন সপ্তাহ। তারপরেই দেশজুড়ে শুরু হবে লোকসভা ভোট। কিন্তু এই মুহূর্তে রামমন্দির থেকে সাম্প্রদায়িকতার জিগিড়। নোটবন্দী থেকে জিএসটি। এমনকি সিবিআই লেলিয়ে দেওয়া বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, তাঁর কোনও অস্ত্রই কাজে আসছে না আর। গত লোকসভা ভোটের আগে নিজেকে ‘দেশের চৌকিদার’ দাবি করা নরেন্দ্র মোদী এবার ফের সেই স্লোগান অন্য ভাবে ব্যবহার করতে চাইলেও তাকে ভোঁতা করতে আসরে নেমেছেন হার্দিক প্যাটেল ও রাহুল-প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরা। অখিলেশ-মায়াও ছুঁড়ছেন পাল্টা ‘চৌকিদার’ বাণ। চাপের মুখে চৌকিদারের জোর বাড়াতেই এখন মরিয়া মোদী।
রাফাল-প্রশ্নে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাহুল স্লোগান তুলেছিলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়।’ সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে আসর গরম করার চেষ্টা করলেও সেই স্লোগানকে ঢাকা দেওয়া যায়নি। ক্ষত মেটাতে নিজের নামের সঙ্গেই ‘চৌকিদার’ জুড়ে দেন মোদী। বাকিদেরও জুড়তে বলে চৌকিদারের দায় ভাগ করতে চেয়েছেন। সেই লক্ষ্যে শুরু করেছেন ‘আমিও চৌকিদার’ অভিযান। এবার বিজেপি দাবি করল, দেশে এক কোটির বেশি লোক এমন ‘চৌকিদার’ হয়েছেন।
তাঁদের থেকেই ২৫ লক্ষকে বেছে নিয়ে আগামীকাল ‘দোলের মেজাজে’ অডিয়ো বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে যখন কালই প্রিয়ঙ্কা বারাণসীতে গিয়ে দোল খেলবেন। ৩১ মার্চ ফের দেশের পাঁচশো জায়গায় ‘চৌকিদার’দের ভিডিয়ো বার্তা দেবেন। সেখানে এনডিএর শরিকেরাও সামিল হবে বলে আজ জানাল বিজেপি। যদিও এই শরিকেরাই মোদীর দায়ের ভাগ নিতে নারাজ। ‘আমিও চৌকিদার’ স্লোগানে গলা মেলায়নি তাদের অনেকেই।
রাহুল গান্ধী গতকালই বলেছিলেন, ‘চুরি ধরা পড়তেই প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে চৌকিদার হতে বলেন!’ বারাণসীর পথে প্রিয়ঙ্কাও বলেন, ‘চৌকিদার ধনীদের হয়, গরিবদের নয়।’ ভাই-বোনের জুটির আক্রমণ সামলাতে রবিশঙ্কর প্রসাদকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করায় বিজেপি। রাহুল-প্রিয়াঙ্কার পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ করেন মন্ত্রী। কিন্তু শুধু তো রাহুল-প্রিয়াঙ্কা নন। মায়াবতীও টুইটে কটাক্ষ করে বলেন, “তা হলে নরেন্দ্র মোদী এ বারের ভোটে আর ‘চাওয়ালা’ নন, ‘চৌকিদার’! বিজেপির অধীনে দেশের কী বদল দেখছি! সাবাশ।’’
অখিলেশ আবার নিয়ে এলেন নতুন হ্যাশট্যাগ— ‘বিকাশ পুছ রাহা হ্যায়’। এই হ্যাশট্যাগে রাফালের ফাইল চুরি থেকে কৃষকদের বিমা খাতে দুর্নীতি— তুললেন অনেক প্রশ্নই। ছাড়লেন না লালু-পত্নী রাবড়ী দেবীও। তিনি শোনালেন, ‘এক নাক কাটা ব্যক্তি বেইজ্জত হওয়ার পর অন্ধভক্তদের নাক কাটিয়ে দেন! নিজের অসম্মান সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন!’ সঙ্গে তিনিও জুড়লেন ‘চৌকিদারই চোর’। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও দিল্লীতে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “গোটা চৌকিদার পর্ব দেখে মনে হচ্ছে, ‘মোদীবাবা আর চল্লিশ চোর’! নরেন্দ্র মোদী তাঁর ১০ লাখি সুট আর ৫ হাজার পোশাকও তত পাল্টাননি, যত বার স্লোগান পাল্টেছেন! সবই বিফল হয়েছে। তাই একই ব্যক্তিকে বারবার নতুন করে ব্র্যান্ডিং করতে হয়।’’