গোটা দেশের মধ্যে তৃণমূলই একমাত্র দল, যারা নতুনদের ওপর ভরসা রাখার সাহস দেখাতে পারে। আর তার হাতেগরম প্রমাণ ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা। বাম-কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এই অভিযোগ বরাবরই উঠত যে দলে কোনও নতুন মুখই নেই, দল চালাচ্ছেন সেই ‘বুড়ো ভামেরা’ই। তৃণমূলের দিকে তা নিয়ে আঙুল তোলার কোনও জায়গাই রাখেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন, সে দিকে চোখ রাখলেই দেখা যাবে, এবারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল নেত্রী দলের পুরনো মুখদের পাশাপাশি আস্থা রেখেছেন একঝাঁক তরুণ তুর্কীর ওপর। রাণাঘাটের প্রার্থী রুপালি বিশ্বাস, কৃষ্ণনগরের প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, বসিরহাটে নুসরত জাহান, যাদবপুরে মিমি, ডায়মন্ড হারবারে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশই তরুণ মুখ।
শুধু তাই নয়। রুপালি, মহুয়া, মিমি, নুসরতদের বয়স একদিকে তিরিশের নীচে, আবার যারা প্রত্যেকেই মহিলা। অর্থাৎ শুধু নয়া প্রজন্মকে রাজনীতির ময়দানে আনাই নয়, প্রার্থী তালিকার ৪১ শতাংশ মহিলাকেও জায়গা দিয়েছেন মমতা। উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে তৃণমূল। অন্যদিকে, রাজ্যে এখনও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজই চূড়ান্ত করে উঠতে পারেনি বিজেপি। আবার আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতেই ধাপে ধাপে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে শুরু করেছে কংগ্রেস ও বামেরা। সুতরাং এবারের ভোটে বাংলাতে লড়াই হবে চতুর্মুখী।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এবার একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে তরুণ তুর্কীরা। মমতার উদ্দেশ্য, পুরনোদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নতুনদের চিন্তাভাবনা এবং সর্বশক্তি দিয়ে উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার লড়াকু মেজাজকে কাজে লাগানো। আসলে বয়স অনেক ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে যায়। সেদিক থেকে তরুণদের তাজা রক্ত হওয়ায়, সবরকমের বাধা পেরতেই তারা সক্ষম হবে বলে মনে করছে দল। কারণ বয়সজনিত সমস্যা তাঁদের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
এবারের ভোটে নতুন ভোটারের সংখ্যা প্রচুর। আর নতুন ভোটার মানেই তারা চাইবে এমন কাউকে ভোট দিতে যারা যুব সম্প্রদায়ের অংশ। আর এখানেই অন্য সকলের থেকে অনেক এগিয়ে আছেন মমতা। একদিকে যাদবপুরে মিমি, বসিরহাটে নুসরত- এই দুজন বর্তমানের অন্যতম সেরা দুই অভিনেত্রী। তরুণ তরুণীদের মধ্যে মারাত্মক জনপ্রিয়। তাই নতুন ভোটাররা যে তাঁদের দিকেই ঝুঁকবেন, সে কথা বলাই বাহুল্য।
তুলনা করলে দেখা যাবে মিমির বিরুদ্ধে যাদবপুরে সিপিএমের হয়ে দাঁড়ান বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বা বসিরহাটে নুসরতের বিরুদ্ধে দাঁড়ান সিপিআই প্রার্থী পল্লব সেনগুপ্তরা বয়সে অনেকটাই প্রবীণ। একদিনে যেমন বয়স তাঁদের ক্ষেত্রে একটা বাধা, তেমনি নতুন ভোটাররাও চাইবেন না তরুণ প্রজন্মকে ছেড়ে তাঁদের ভোট দিতে।
আবার কৃষ্ণনগরের প্রার্থী মহুয়া মৈত্রর বয়স অল্প হলেও অন্ত্যন্ত দক্ষ রাজনীতিক তিনি। মানুষ তাঁর কাজ নিয়ে ভীষণ সন্তুষ্ট। করিমপুরের বিধায়ক হলেও তিনি এবারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী। নতুন ভোটাররা তো বটেই, সাধারণ মানুষও তাঁর পাশেই আছেন। উল্টো দিকে দাঁড়ান বয়সে প্রবীণ বাম প্রার্থী শান্তনু ঝাঁ যে তার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবেন না, তা এখনই স্পষ্ট। তৃণমূলের অন্যান্য প্রার্থীরাও বেশির ভাগই তরুন তুর্কীর দলে। ফলে তারা ক্ষমতায় এলে যে বাংলার উন্নয়নের ধারা আরও তরান্বিত হবে তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, কংগ্রেস বা সিপিএমের এমন পক্ষ থেকে এমন কোনও তরুণ মুখ উঠে আসছেনা। মানুষ চাইছেনও না তাঁদের। প্রচারে মিলছে না সাড়া। ফলে সার্বিক ভাবে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। মমতার উন্নয়নে, মমতার ইয়ং ব্রিগেডেই আস্থা রাখছেন বাংলার মানুষ। আর এখানেই এগিয়ে রয়েছেন মমতা। ভোটের আগে তরুণ প্রজন্মকে টানতে তরুণ প্রজন্মকেই প্রার্থী করা তাঁর মাস্টারস্ট্রোক বলেই মনে করছেন রাজনীতিবিদরা। ভোটের আগেই রাজ্য তথা দেশের যুবশক্তির মন জিতে নেওয়া তাঁর নৈতিক জয়ই।