মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই এই দাবি করে এসেছেন যে বাংলায় রামের নতুন দোসর হয়েছে বামেরা। সাম্প্রতিক কালে বিজেপি ও সিপিএমের কার্যকলাপ দেখে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে ছিলেন, এ রাজ্যে সিপিএম বিকিয়ে গিয়েছে বিজেপির কাছে। কোনও নীতি-আদর্শ আর ওদের নেই। এখন সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটা দলে পরিণত হয়েছে। সেই সাইনবোর্ডও বিজেপি বানিয়ে দিচ্ছে। তাই বাংলায় এখন একদিকে বাম, অন্যদিকে দোসর রাম। তৃণমূল নেত্রী সেই দাবি যে মোটেই ভ্রান্ত নয়, আবারও তা প্রমাণ হয়ে গেল। ভোটের মুখে বামেদের ‘রাম’নাম করতে দেখা গেছে আগেও, তবে এবার দেখা গেল ‘রাম’-এর মুখে বামের স্লোগান।
মেয়েটির বয়স কতই বা! একুশও পেরোয়নি সে। নাম রিয়া মাইতি। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে সে। বিষয় প্রাণিবিদ্যা। যাঁরা একটু-আধটু রাজনৈতিক খবর শোনেন বা দেখেন, তাঁরা এই মেয়েটিকে দেখেছেন। এই তো সেই ট্যাব ব্যবহারকারী ‘কৃষককন্যা’, বাংলায় বামেদের কৃষক পদযাত্রার সময় যিনি মিছিলে হেঁটেছিলেন। বেশিদিন আগের কথা নয়। গত নভেম্বরের ২৮-২৯ তারিখ। বামেদের কৃষক পদযাত্রায় তিনি ছিলেন একদম সামনের সারিতে। দামি ব্রান্ডের হালকা গোলাপি কুর্তি, নীল ফেডেড জিনস, পায়ে স্নিকারস। ঘড়ির পাশাপাশি হাতে দামি ট্যাব। সেই হাত তুলেই তিনি স্লোগান দিচ্ছিলেন, আর অন্যরা তাতে গলায় গলা মেলাচ্ছিলেন।
লোকসভার ঠিক মুখে এই ভোট বাজারে দেখা গেল বিজেপি বামেদের সেই কৃষককন্যার দেওয়া যআবতীয় স্লোগানই ‘ছিনতাই’ করেছে! বাংলায় বিজেপির প্রচারের যে থিম সং হয়েছে, তা বেঁধেছেন দলের গায়ক-সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। গেয়েছেন তিনিই। এবং গানের কথাতেও তাঁর অবদান আছে। কিন্তু দেখা গেছে বাবুলের সেই গানে ফিরে ফিরে এসেছে রিয়ার সরকার বিরোধী স্লোগান! এখন প্রশ্ন উঠছে আদতে কি ওই স্লোগান ‘চুরি’ই হয়েছে, নাকি পারস্পরিক সমঝোতার পরই ‘রাম’-এর গানে ঠাঁই পেয়েছে বামের স্লোগান? রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, যেহেতু বামেদের তরফ থেকে এখনও এর বিরোধীতায় টুঁ শব্দটিও করা হয়নি, তাহলে ধরে নেওয়াই যায় এতে সায় আছে তাদের। অর্থাৎ এর থেকেই স্পষ্ট যে, চুরি বা ছিনতাই নয়, ‘বন্ধু’ বামের মত নিয়েই তাদের স্লোগান গানে ব্যবহার করেছে ‘রাম’।