গত সপ্তাহের রবিবারই দেশজুড়ে লোকসভা ভোট ঘোষণা ও নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর নির্বাচন ঘোষণা হতেই বাংলায় ৪২-এ ৪২টি আসন প্রাপ্তির লক্ষ্যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে নিজেদের দাবি করলেও এখনও পর্যন্ত বিজেপি তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। এরই মধ্যে শুক্রবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন যে, লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো লোক কমই আছে আমাদের। দিলীপের এই মন্তব্যের পরেই অসন্তুোষ মাথাচাড়া দিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
অন্যদিকে, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন ভোটে জিততে কোনও নীতি-আদর্শের তোয়াক্কা করবেন না তাঁরা। তাই বাংলায় নিজেদের জমি শক্ত করতে তৃণমূল-সহ অন্যান্য সব দল থেকে ঘাড়ধাক্কা খাওয়া বা বহিষ্কৃত নেতাদের দলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। এমনকি অন্যান্য দল ভাঙিয়ে কিছু ‘গদ্দার’ নেতাকেও লোকসভায় প্রার্থী করার টোপ দিয়ে দলে টানা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ বাড়ছে বিজেপির নীচুতলার কর্মীদের মধ্যে। কারণ সারা বছর খেটেও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না একনিষ্ঠ দলীয় কর্মীদের অনেকেই। কিন্তু অন্য দল থেকে বিক্ষুব্ধদের নিয়ে এসে প্রার্থী করানো হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন নতুনদের ভিড়ে দলে কোণঠাসা হওয়া পুরনোরা।
এক্ষেত্রে সদ্য তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করা ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংয়ের প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের খবর, তৃণমূল থেকে আসা সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরার পাশাপাশি এবার অর্জুন সিংকেও প্রার্থী করতে চলেছে বিজেপি। বিষ্ণুপুর থেকে সৌমিত্র ও বোলপুরে অনুপমকে প্রার্থী করা হতে পারে। আর ব্যারাকপুরের প্রার্থী হতে পারেন অর্জুন। এমন পরিস্থিতিতে ওই সব কেন্দ্রে দলের সাধারণ সম্পাদকরা যে ভোটের টিকিট পাবেন না, তা ধরেই নেওয়া যায়। সে নিয়ে তাঁদের অনেকের মধ্যেই উষ্মা দেখা গেছে। বিজেপির দিলীপ ঘনিষ্ঠদের দাবি মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজের পছন্দের নেতাদের ভোটের টিকিট দিতে চাইছেন। তাঁর হাত ধরে অন্য দল থেকে আসা সৌমিত্র, অনুপম, অর্জুনরা যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েই ভোটের টিকিট পাচ্ছেন, তখন খালি হাতেই বসে দলের পুরনোরা।
ফলে ক্রমশই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন দলের পুরনোরা। মুকুলকে নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ চরমে। যার প্রভাব পড়ছে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়ায়। ইতিমধ্যেই বিজেপির প্রার্থী বাছাই নিয়ে দক্ষিণ মালদা ও উত্তর মালদা আসন দুটিতে জটিলতা তৈরী হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের ঠিক করা প্রার্থীদের মানতে নারাজ মালদহ জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। মালদা জেলার বিজেপির সভাপতি সঞ্জিত মিশ্র জানান, বামফ্রন্ট ছেড়ে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া খগেন মূর্মূকে উত্তর মালদার প্রার্থী করা হলে ক্ষতি হবে দলের। তেমনই দক্ষিণ মালদার ক্ষেত্রেও কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের চাপিয়ে দেওয়া প্রার্থী হলে মালদহে বিজেপির সাজানো বাগান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এদের প্রার্থীপদ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সঞ্জিত মিশ্র।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের দূত ফোন মারফৎ জেলা বিজেপির নেতৃত্ব তথা সভাপতিকে সমঝোতার আবেদনও জানিয়েছেন। কিন্তু মালদার জেলা সভাপতি ও জেলা নেতৃত্ব তাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। কোনওভাবেই মালদার দুটি আসনে কেন্দ্র ও রাজ্যের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ তাঁরা। সঞ্জিত মিশ্র জানিয়েছেন, যারা নিজেদের সুবিধা বুঝে নিজেদের রঙ বদলায়। তাদের মানুষ ভালো চোখে নেয় না। এই কথায় যে খুব সূক্ষভাবে মুকুলকেও বিঁধেছেন তিনি, তা স্পষ্ট। ফলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি যাই বলুক না কেন, নতুনদের ভিড়ে কোণঠাসা হওয়া পুরনোরা যে ভোটের মুখে বেঁকে বসতে পারেন, এই সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দিতে পারছেন না কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা।