মঙ্গলবারই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই তালিকায় নজর দিলে দেখা যাবে, রাজ্যের বহু কেন্দ্রে নতুনদের সুযোগ দিলেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় পুরনো মুখের ওপরই ভরসা রেখেছেন তিনি। এই জেলার মধ্যে রয়েছে বর্ধমান পূর্ব (তফসিলি জাতি সংরক্ষিত) ও বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা। বর্ধমান পূর্বে প্রার্থী করা হয়েছে সুনীল মন্ডল আর বর্ধমান-দুর্গাপুরে প্রার্থী করা হয়েছে ডাঃ মমতাজ সঙ্ঘমিতাকে।
নাম ঘোষণা হওয়ার পরই কালনা ২ নম্বর ব্লকের সিংয়েরকোণ থেকে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন সুনীল মন্ডল। তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের আমার ওপর ভরসা রেখেছেন বলে আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর আদর্শ, তাঁর উন্নয়ন যজ্ঞকে সামনে রেখেই প্রচারে ঝাঁপাব।’ উল্লেখ্য, কাঁকসার একটি স্কুলের বাংলার শিক্ষক সুনীলবাবু ছিলেন জেলার ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক। তবে মমতার উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হতেই বছর ছয়েক আগে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে গত লোকসভা ভোটে ঘাসফুলের টিকিটে লড়ে বিপুল ব্যবধানে জেতেন।
তিনি আরও বলেন যে, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্মই হল উন্নয়ন। তাই উন্নয়নকে পাখির চোখ করেই সাংসদ তহবিলের অর্থ এলাকার উন্নয়নের কাজে লাগিয়েছি। সাধারণ মানুষের দাবি মেনে কাটোয়ার মালঞ্চা গ্রামে ব্রহ্মাণী নদীর ওপর সেতু, রায়নার সুবলদহ গ্রামে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর বাড়ি সংস্কার, সব বিধানসভা এলাকায় বাতিস্তম্ভ লাগানো-সহ আরও নানা উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করেছি।’
কোনওদিন কোনও বিতর্কে না জড়ানো, নীরবে উন্নয়নের কাজ করার পুরস্কার হিসেবেই সুনীলবাবু এবারও সাংসদ পদে লড়ার টিকিট পেলেন বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি বলেন, ‘প্রার্থী কে হবেন, তা ঠিক করেছেন দলনেত্রী। আমরা সেই প্রার্থীকে গতবারের তুলনায় আরও বেশি ভোটে জেতানোর লক্ষ্যে মাঠে নেমেছি।’ বর্ধমান পূর্ব লোকসভার মধ্যে রয়েছে কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, কালনা, ভাতার, মেমারি, জামালপুর ও রায়না।
অন্যদিকে, একসময় ‘লালদুর্গ’ বলে পরিচিত বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় গতবার মমতা ভরসা করেছিলেন সৈয়দ মনসুর হবিবুল্লার মতো বামপন্থী নেতার কন্যা মমতাজ সঙ্ঘমিতার ওপর। সাইদুল হককে হারিয়ে ওই কেন্দ্র থেকে জয়ীও হয়েছিলেন মমতাজ। এবারও তাঁর ওপরই আস্থা রেখেছেন দলনেত্রী। মমতাজ মনে করেন, সাংসদ হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ মেনে উন্নয়নের কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবেই দ্বিতীয়বারের জন্যই তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট, যাত্রী প্রতীক্ষালয়, অ্যাম্বুলেন্স প্রদানের মতো সাধারণ উন্নয়ন তো বটেই, তার সঙ্গে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রায় আড়াই কোটি টাকা খরচ করেছেন তিনি।
তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘পুরনোদের টিকিট দেওয়ায় আর নতুন করে পরিচিত করানোর সমস্যা নেই। আর তার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন তো রয়েইছে। পুরনো আর নতুন নেতা-কর্মীরা জেলাজুড়ে প্রচারে ঝড় তুলছেন। সেই ঝড় ভোটবাক্সে দেখা যাবে।’