গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও আগামী ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। রবিবার দিল্লীতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা জানান, এ রাজ্যের ৪২টি আসনে মোট ৭ দফায় ভোটগ্রহণ হবে। একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন সেই সাত দফা ভোটের নির্ঘন্টও। সূচী ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বিজেপির ইভিএম কারচুপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি। সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সকলেরই দাবি ছিল ব্যালট প্রথায় ভোট গ্রহণ করতে। কিন্তু সেই আবেদন খারিজ করে কমিশন জানালো, ব্যালটে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সন্দেহের গন্ধ কিন্তু থেকেই গেল।
কমিশন জানিয়েছে, ইভিএমের সঙ্গেই প্রতিটি বুথে ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেল বা ‘ভিভিপ্যাট’ যন্ত্র লাগানো থাকবে। তার ফলে কারচুপির আশঙ্কা থাকবে না। কিন্তু প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে কত শতাংশ বুথের ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্রে পড়া ভোটের তুলনা করা হবে, তা নিয়ে নীরবই থেকেছে কমিশন। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি কমিশনের তরফে।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পরেই ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব হন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী। একে একে সরব হন অখিলেশ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল ও রাহুল গান্ধীর মতো বিরোধী নেতারা। বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি সরকারের শরিক শিবসেনাও ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। লন্ডন থেকে এক জন দাবি করেন, নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার ইভিএমে কারচুপি সম্ভব। আর তা করেই গত লোকসভা নির্বাচন জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এই প্রসঙ্গে একটিও মন্তব্য করেন কমিশন। বিরোধীদের পক্ষ থেকে ব্যালটের পুরনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার দাবি জানানো হয়। সেই দাবি যে মানা সম্ভব নয়, তা আগে জানিয়ে দিয়েছিল কমিশন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ইভিএমের সঙ্গে সব বুথে ভিভিপ্যাট যন্ত্র লাগানো থাকবে। ওই যন্ত্রে ভোটার কাকে ভোট দিলেন তা ৭ সেকেন্ডের জন্য ফুটে ওঠে। এবং সেই তথ্য মেশিনে জমা থাকে। বিরোধীদের দাবি ছিল, ব্যালটে ফেরা একান্তই সম্ভব না হলে কোনও একটি কেন্দ্রের পঞ্চাশ শতাংশ বুথে ইভিএমে পড়া ভোটের সঙ্গে ভিভিপ্যাটে জমা হওয়া তথ্য তুলনা করে দেখা হোক। তাতে সন্দেহ অনেকটা কমবে।
সকলে সরব হলেও কমিশন শুরু থেকেই কারচুপির প্রশ্ন উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু উনিশের ভোটের কথা ভেবে কমিশন কোনও নতুন সিদ্ধান্ত নেয় কি না, তা জানতে উদ্গ্রীব ছিল সব শিবিরই। বিরোধীদের দাবি মতো পঞ্চাশ শতাংশ বুথের ভোট গোনার দাবি প্রথমেই খারিজ করে দেন কমিশন কর্তারা। পরিবর্তে নতুন সমীকরণ কী হবে, তা নিয়েও অবশ্য আজ মুখ খোলেননি কোনও কমিশন কর্তাই।
বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে ভোটের সূচী ঘিরেও। গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই এই সাত দফায় ভোটের আয়োজন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই বিজেপি নেতৃত্ব বারবার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য ছিল, বাংলায় এক দফায় ভোট করালে চলবে না। নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশের পর দেখা গেল, গেরুয়া শিবিরের দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর ফলে গণতন্ত্র নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাঁদের মতে, বিজেপির প্রভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে কমিশন।