৪২টি আসনে ভোট করতে সাত দফা কেন? বাংলায় লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর ইতিমধ্যেই এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ওয়াকিবহাল মহলে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে এভাবে নির্বাচনকে নজিরবিহীন আখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। এবার ৭ দফা ভোট নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানালেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রবিবার সন্ধ্যায় চেতলায় নিজের দলীয় অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে ফিরহাদ বলেন, ‘দলের কোনও অসুবিধে হবে না। অসুবিধায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। রমজান মাসে ভোট হলে চরম অসুবিধে হয়। রোজা পালন করতে হয়। এটা তো বোঝা উচিত ছিল। সংখ্যালঘু মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। তবে আমরা বলছি, তা সত্ত্বেও সব মানুষ ভোট দিতে আসবেন।’
উল্লেখ্য, আগামী ৪ মে থেকে রমজান মাস শুরু। রোজা চলবে। মে মাসের ৬, ১২ এবং ১৯ তারিখ শেষ তিন দফা নির্বাচন। অর্থাৎ শেষ দুই দফায় পুরোপুরি রোজার মধ্যেই ভোট গ্রহণ হবে। স্বভাবতই, মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে রোজা রেখেই ভোটে অংশ নিতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই ফিরহাদ বলেন, একদিকে রমজান মাস, অন্যদিকে এতদিন ধরে ভোট হলে রাজ্যের মানুষই অসুবিধায় পড়বে। যদিও এর কোনও প্রভাব ভোটের ফলাফলে পড়বে না। রাজ্যের মোট ৪২টি লোকসভা আসনের সবকটি জিততে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল। কিন্তু এভাবে রমজান পর্যন্ত ভোট টেনে নিয়ে যাওয়া মোটেই সঠিক হয়নি বলে মনে করেন তিনি।
তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘৭ দফা ভোটে আমরা ভয় পাই না। তার কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সারা বছরই আমরা রাস্তায় নেমে কাজ করি। মুখ্যমন্ত্রী প্রতিনিয়তই উন্নয়ন করে চলেছেন। তিনি মানুষের হৃদয়ে আছেন। হৃদয় থেকে তাঁকে তো বের করা যাবে না। গুজরাটে দাঙ্গা হল, মানুষ মারা গেল, সেখানে এক দফায় ভোট হবে। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ৭ দফা ভোট। রমজানে ভোট হচ্ছে, তাই খারাপ লাগছে।’ তবে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, স্বৈরাচারী মোদীকে পরাজিত করতে সব মানুষ একসঙ্গে এই ভোটে শামিল হবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে সম্মান জানিয়ে বলছি, মানুষের এতে অসুবিধে হবে ঠিকই, তা সত্ত্বেও সকলেই মোদীর বিরুদ্ধে ভোট দিতে নামবেন। আমরা করব জয়, আমরা করব জয়।’
তবে এক প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ বলেন, ‘কেন্দ্রের তৈরি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন কমিশন ৭ দফা ভোট ঘোষণা করে দিল। এর প্রতিবাদ ব্যালটে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় জনগণকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। ইউনাইটেড ইন্ডিয়া এবার একসঙ্গে লড়াইয়ে নামছে। মোদীর দিন শেষ। ২০১৬ সালেও আমাদের চূড়ান্ত অসুবিধায় ফেলেও বিজেপি কিছু করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ মমতার হাতেই ২১১টি আসন তুলে দিয়েছিলেন।’ বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেসের জোট নিয়ে তৃণমূলের তরফে ফিরহাদের বক্তব্য, ‘যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল। একটা সময় সিপিএমের হাতে বহু কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন। বর্ধমানের সাঁইবাড়ির ঘটনা আজও ভোলা যায় না। তাই জোট নিয়ে বলতে গেলে খারাপ লাগে। কংগ্রেস-সিপিএম ক্রাচ নিয়ে হাঁটছে। ওঁরা সুস্থ থাকুন।’
তবে, সাত দফায় ভোটে যারা তৃণমূল নেত্রীকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল, তাদের ‘সে গুড়ে বালি’ বলেই মনে করেন ফিরহাদ। এবারের লোকসভা ভোটে তৃণমূলের লক্ষ্য দিল্লী। মোদীকে হঠাতে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে দেশের বিরোধী শক্তিকে এককাট্টা করেছেন মমতা। ইতিমধ্যেই দিল্লী-সহ ভিন রাজ্য মোদী বিরোধী সভাও করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ভালোই হয়েছে, ভিন রাজ্যে মোদীর বিরুদ্ধে প্রচারের সুযোগ পেয়ে গেলেন নেত্রী। দলের নির্বাচনী কমিটির তরফে ফিরহাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, এসব করে মমতাকে দমানো যাবে না।