যখন এদেশে শুধুমাত্র কাশ্মীরের বাসিন্দা হওয়ার জন্য বহু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন কাশ্মীরিরা, ঠিক তখনই উত্তরপাড়ার এক বাঙালি বিয়ে বাড়ির অতিথি হয়ে আসেন এক কাশ্মীরি শালওয়ালা। হিন্দমোটরের বাসিন্দা ডালিয়া অধিকারী ধর্ম, ক্ষোভ কে দূরে রেখে কেবল মানুষের ভালোবাসার নিরিখে কাছে টেনে নিয়েছেন আফাক ও তাঁর পরিবারকে। শুধু রুজি-রুটির জন্য এক দিন দরজার কড়া নেড়েছিলেন বছর কুড়ির আফাক শাহ। তাঁর কাপড়ের গাঁটরি থেকে বেরিয়েছিল শাল, কম্বল। ন’বছর আগের সেই আফাক আজ হয়ে উঠেছেন এই বাঙালি পরিবারের আপনজন। রবিবার ডালিয়ার মেয়ে মিমির বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে সারা দিন কাটিয়েছেন আফাক, তাঁর স্ত্রী আসিয়া এবং তাঁদের দেড় বছরের ছেলে আদি। ‘বোনে’র জন্য এনেছেন তাঁর পছন্দের সাদা-কালো সিল্কের শাড়ি৷
২০১৫ সালে ডালিয়া আর মিমি কাশ্মীর গিয়েছিলেন। ছিলেন আফাকের বাড়িতেই৷ সেই স্মৃতি মিমির আজও টাটকা, ‘‘শ্রীনগরে ওঁদের বাড়িটা কী সুন্দর! বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তিনতলা কাঠের বাড়ি৷ ওঁদের বাড়ির সকলের সঙ্গে কয়েকটা দিন কী ভাল কেটেছিল!’’ মিমির বাবা শঙ্কর অধিকারী জানান, ‘‘স্ত্রী-মেয়েকে ওখানে একলা যেতে দিয়েছিলাম শুধু আফাকের ভরসায়।’’
জঙ্গী হামলার পর একদিন আফাক গিয়েছিলেন এক বাঙালি খদ্দেরের কাছ থেকে প্রায় দশ হাজার টাকা পাওনা আনতে। কিন্তু সেই বাড়ির ভদ্রলোক তাঁকে টাকা তো দেননি উলটে গালি করেন। আফাক বলেন, “ওই ভদ্রলোক আমাকে টাকা দিতে চাইলেন না। কারণ, আমি নাকি পাকিস্তানি! অনেক গালাগালিও দেন”। সে দিনের বচসায় অবশ্য আফাকের পাশে দাঁড়ান বাঙালিরাই। পরামর্শ দেন আফাককে থানায় যেতে। লিন্তু আগাক জানান, “থানায় যাওয়ার সময়ই ওই ভদ্রলোকের স্ত্রী ফোন করে বলেন, তুমি তো আমার ভাই। তার মানে যে কটূক্তি তোমাকে করা হয়েছে, তা আসলে আমাকে করা হয়েছে। ক্ষমা করো। তোমার টাকা নিয়ে যাও”।
গত দশ বছর উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগরে ব্যবসা করতে করতে আফাক এখন প্রায় বাঙালি। বাংলা ভাষা পরিস্কার বলতে পারেন। আফাক এর স্ত্রী আসিয়া জানান, এখানে এক বাঙালি-বাড়িতেই ভাড়া থাকেন তাঁরা৷ বাড়িওয়ালা ‘নানা-নানি’র কাছে সারাদিন থেকে বাংলা ভাষাটাই বলতে শিখেছে আদি। এ বার তাকে কাশ্মীর নিয়ে যাবেন আসিয়া-আফাক। সামনের বছর সেখানকার স্কুলে ভর্তি হবে আদি। কিন্তু আফাক ফিরে আসবেন বাংলায়। কারণ কলকাতাকে তিনি ভালোবাসেন। পুলওয়ামা-কাণ্ড ঘটার পর থেকে যেভাবে আক্রমণ নেমে আসছে কাশ্মীরিদের উপর সে বিষয়ে আফাক মনে করেন, “ও সব করেছে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ৷ সকলে এ রকম নন। আমার সঙ্গেও এমন ঘটেছে হিন্দমোটরেই”।