তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতিও বটে। তাঁর এক হুঙ্কারেই নাকি কাঁপেন গেরুয়া শিবিরের তাবড় তাবড় নেতারা। কিন্তু ভাগ্যচক্রে আজ তাঁর কথাই গিলতে চাইছেন না দলের কেউ। নিজের ইচ্ছে মতো নিহত জঙ্গীর সংখ্যা বলে দিয়ে নিজের দলেই এখন ‘একা’ প্রবল ক্ষমতাধর অমিত শাহ। বালাকোট অভিযানের পরে কেন্দ্র ও বিজেপির নানা ‘সূত্র’ থেকে আসছিল নিহত জঙ্গীর সংখ্যা। প্রথম বার প্রকাশ্যে সেই সংখ্যাটি বলেছেন বিজেপি সভাপতিই। গুজরাটে তাঁর দাবি, আড়াইশোর বেশি জঙ্গী মারা গেছে। কিন্তু সেই সংখ্যা নিয়ে যেমন ধোঁয়াশা, তেমন এর চেয়েও বড় প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে। তা হল, সরকারের ‘তথ্য’ অমিত জানলেন কী করে?
যেখানে মৃত জঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী চুপ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী চুপ, এমনকি বায়ুসেনাও বলছে গোনাটা তাদের কাজ নয়। সেখানে শাহ কীভাবে দাবি করছেন আড়াইশো জঙ্গী নিকেশ হয়েছে বিমান হামলায়? আর কীসের ভিত্তিতেই বা করছেন? এমনই না না প্রশ্ন উঠছে এখন বিজেপির অন্দরেও। তবে আসামের ধুবুড়িতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘এনটিআরও জানিয়েছে, হামলার আগে (জঙ্গী ঘাঁটিতে) তিনশো মোবাইল সক্রিয় ছিল। ওই তিনশো মোবাইল কি গাছেরা ব্যবহার করছিল?’ কিন্তু নিহতের সংখ্যা স্পষ্ট করেননি রাজনাথও। ফলে প্রশ্নটা রইলই— সরকারের অংশ না হয়েও অমিত শাহ কী ভাবে নিহতের সংখ্যা বলছেন!
যদিও সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ সামনে নিয়ে এলেন নতুন যুক্তি— ‘অনুমান’। তাঁর কথায়, ‘তিনি (অমিত) অনুমান থেকেই বলেছেন হয়ত। সংখ্যা এর থেকে বেশিও হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে আন্দাজে যাব না। যা বলার সরকার বলবে। আসল কথা হল, বড় অভিযান হয়েছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর আমরা সেনা ও বায়ুসেনাকে বিশ্বাস করি।’ তা হলে কি সভাপতির বক্তব্যকে খোদ বিজেপিই খারিজ করছে? রবিশঙ্কর যা উত্তর দিলেন, তার সঙ্গে প্রশ্নের তেমন সামঞ্জস্য নেই। বললেন, ‘দলের সভাপতি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। তিনি একটি হিসেব দিয়েছেন মাত্র।’
অন্যদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে প্রশ্ন করা হলে তিনিও এড়িয়ে যান। তাঁর বক্তব্য, ‘বিদেশসচিব যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেটিই সরকারের আনুষ্ঠানিক অবস্থান।’ উপরন্তু নির্মলার মতে, এটি সামরিক অভিযানই নয়। এতে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আবার বিজেপির এক নেতা মানলেন, সরকার কোনও সংখ্যা বলার আগে দলের পক্ষ থেকে সভাপতি তা বলে ফেলায় বিরোধীরা তাঁদের চেপে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। বায়ুসেনার অভিযানের দিন সরকারের ঘোষণার আগেই মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর মোদী সরকারের তারিফ করে বসেন। অমিত সে জন্য তাঁকে ধমক দিয়েছিলেন। বিজেপির সেই নেতার কথায়, ‘এ বার খোদ অমিতেরই মুখ থেকে এমন কথা কী করে বেরিয়ে পড়ল, কে জানে?