একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি মধ্যগগনে। ডলবি সাউন্ড চলে এসেছে। সিনেমাস্কোপ ও। জাঁদরেল সব সিনেমাকরিয়ে দেশে। চাইলেই ওই যে পাক সেনা যেদিন বাপ বাপ করে আত্মসমর্পণ করে মুচলেকা সই করছিল, সেদিন ভালো ক্যামেরা আর মাইক লাগিয়ে একটা ভিডিও বানাতে পারতো ভারত। দারুণ প্রশংসা হতো ভারতকে নিয়ে। পাকিস্তানকে নিন্দামন্দ ও করা হতো৷ ভারত করেনি এই নোংরামো। ভারতকে শান্তি ও সৌজন্য শেখানো বাতুলতা পাকিস্তানের।
এই একাত্তরের যুদ্ধেই ৯১,০০০ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে জামিন দেয় ভারত। তাঁদের সসম্মানে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হয়। এদেরকে ও চাইলে দাঁড় করিয়ে ‘হিন্দুস্থান জিন্দাবাদ’, ভারতের সেনাবাহিনী শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনী ইত্যাদি বলিয়ে নেওয়া যেত। একজনকে ও মুচলেকা অবধি সই করতে হয়নি। তারা দেশে ফিরে, আই এস আই, মুজাহিদদের মাথা বনেছে, ভারতের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী চক্রান্ত করেছে। ভারতকে শান্তি বা সৌহার্দ্য শেখানো বাতুলতা পাকিস্তানের।
এবার আসি একাত্তর যুদ্ধের শেষে। বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা আঁতকে ওঠে বাংলাদেশের মানবাধিকার হনন দেখে। হাজারে হাজারে বাঙালি মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়। অজস্র ‘Children of War’ জন্মায়, যাদের বাবার পরিচয় নেই। প্রায় লাখখানেক বাঙালি খুন হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অকথ্য অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়। এই নৃশংস পাশবিক খানসেনার বংশধরেদের থেকে শান্তির বাণী শোনা অপরাধ।
এবার আসি ১৯৯৯। ভারত। কাশ্মীরের কারগিল যুদ্ধ। পাকিস্তান পরাজিত। ওদেশের এক ডজন সেনাকে কচুকাটা করেছে ভারতীয় ফৌজ। যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানকে অনুরোধ করা হয় সীমান্ত পেরিয়ে এদিকে আসা পাক সেনা জওয়ানদের মৃতদেহ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। অনুরোধ করা হয় তাদের যথাসম্মানে সৎকার করবার জন্য। পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, একটিও মৃতদেহ পাকিস্তানি না। যা ইচ্ছে করতে পারে ভারত। তারা গ্রহণ করবেনা। ভারত চাইলেই টায়ার, কাঠ, প্লাস্টিক ইত্যাদি সহ বেওয়ারিশ মৃতদেহ জ্বালিয়ে দিতো। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলস সসম্মানে পাক পতাকা চড়িয়ে, ইসলামি মতে তাদের দফন করে৷ পাকিস্তানের থেকে জেনেভা কনভেনশন শিখবো না৷
ইমরান খান বরেন্য ক্রিকেটার। তার খেলা বা পৌরুষের অনেক অনুরাগী থাকতেই পারে ভারতে৷ অনেকেরই হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাজনীতির মানুষ হিসেবে ইমরান অত্যন্ত খারাপ। বাকি পাক নেতার মতোই৷ একসময় তালিবানদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। পেশাওয়ার স্কুল হামলার পেছনে নাম উল্লেখিত হয়, স্ত্রী মুজাহিদদের মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষাক। সব্বাই জানে আইএসআই আর সেনার মদতে শরীফকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এখন অর্থ, ক্ষমতা ও অস্ত্রের ভান্ডার তলানিতে, তাই শান্তির বাণী আউড়াচ্ছেন। টাকা এলেই মুম্বাই বা দিল্লিতে ছেলে পাঠাবে সন্ত্রাসী বেশে।
পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী স্বীকার করছে বিবিসি ও সিএনএন এর কাছে যে মাসুদ আজহার ওদেশেই আছে কিন্তু ভিষণ অসুস্থ। তা আমাদের দিয়ে দিক না। আমরা এইমস এ চিকিৎসা করাবো। না মাসুদ আজহারকে ওনারা সন্ন্যাসী সমান ভাবেন?
আমি কিছুদিন আগে পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও ইমরান খানের ঘনিষ্ঠতম সহযোগী ফাওয়াদ চৌধুরীকে প্রশ্ন করেছিলাম, এতো যদি শান্তি শান্তি কামনা করেন, একটা কাজ করুন না। বিসমিল্লাহ বলে হাফিফ সঈদকে আমাদের হাতে তুলে দিন। উনি তো ২৬/১১ সন্ত্রাস হামলার প্রধান অভিযুক্ত। মন্ত্রী মশাই বলেছিলেন, কেন একজন পাক নাগরিককে আপনাদের হাতে তুলে দেবো? আপনারা কি অজিত ডোভাল কে তুলে দেবেন? হাফিস সঈদের সাথে ওনারা জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টাকে তুলনা করেন।
মোদীকে ঘেন্না করতেই পারেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনাকে ভালোবাসার কোন কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিনা। আপনি রাহাত ফতে আলীর গান বা শোয়েব আখতারের বোলিং বা মহিরা, ফাওয়াদের অভিনয় পছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু তাই বলে পাকিস্তান সেনার নোংরা এডিড করা ভিডিও, তাদের জঘন্য প্রোপাগাণ্ডার শিকার হতে হবে আমাদের? আমরা যারা এখনো দেশটাকে এবোটাবাদ, কান্দাহার বা ২০০২ এর গুজরাট হতে দিইনি?
আমার দেশে আমি যুদ্ধ হতে দেবো না। কাশ্মীরিদের নিজের দেশের মানুষই মনে করবো।হিন্দু আর মুসলমানে দাঙ্গা হতে দেবো না। জাতের নামে বজ্জাতি করতে দেবো না। হাফিজ সঈদ, মাসুদ আজহার, বিন লাদেন না, আমার দেশকে বিশ্ব চিনবে গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ, শচীন, শাহরুখ, ঐশ্বর্য, রবিশংকর, এআর রহমান, আলাউদ্দিন খাঁ, জাকির হুসেন, মাধুরি দিক্ষিতের দেশ হিসেবে। একে বালুচিস্তান, সিন্ধ, অহমেদিয়াদের কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প বানাতে দেবো না। পাকিস্তানের থেকে শান্তির বাণী বা সৌহার্দ্য শিখবো না।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত