সমাজকে নতুন আলোর দিশা দেখাতে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ঘুরে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন সমাজকে। শুক্রবার ৯৮ বছর বয়সে নিজের বাড়িতে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শনিবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পলান সরকার আর কোনোদিন বই পৌঁছে দেবেন না গ্রামে গ্রামে।
মৃত্যুর আগে বই পড়ার আন্দোলন সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে পলান সরকার বলেন, “আমি হাঁটতে হাঁটতে এই সমাজটাকে বদলানোর আন্দোলনে নেমেছি। যত দিন আমি হাঁটতে পারি, তত দিন আমার আন্দোলন চলবে। যাঁরা পাঠাগারে আসবেন, তাঁরা ইচ্ছেমতো বই পড়বেন। যেদিন আমার পথচলা থেমে যাবে, সেদিন এই পাঠাগার আমার পক্ষে আন্দোলন করে যাবে”।
বই পড়ার একটি আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য, শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর জন্য, বইয়ের প্রতি ভালোবাসাকে চারদিকে ছড়িয়ে দেবার অবদানস্বরূপ পলান সরকারকে বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে একুশে পদক প্রদান করে। ২০০৭ সালে তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম ডে’ উপলক্ষে বিশ্বের ভিন্ন ভাষার প্রধান প্রধান দৈনিকে একযোগে পলান সরকারের বই পড়ার এই আন্দোলনের গল্প ছাপা হয়। ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে তাঁকে নিয়ে একটি নাটক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাঁর বাড়ির উঠোনে একটি পাঠাগার তৈরি করে দিয়েছেন।
১৯২১ সালে নাটোরের বাগাতিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর অর্থনৈতিক সঙ্কটে তাঁর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ছোটোবেলায় বাবা মারা যাবার পর দাদুর বাড়িতে গিয়ে সেখানে স্কুলে ভর্তি হন। টাকার অভাব ছিল। তবু নিজের চেষ্টাতেই চালিয়ে যান পড়ালেখা। স্থানীয় একটি হাই স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন বইপাগল পলান। প্রতি বছর প্রথম দশে থাকা পড়ুয়াদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর বই বিলির অভিযান। ডায়াবেটিস ধরা পড়া সত্যেও ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে তিনি এই আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। রাজশাহির বেশ কয়েকটি গ্রাম জুড়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন বই পড়ার এক অভিনব আন্দোলন।