বোমা বর্ষণের আওয়াজ পেয়েছিলেন ভোরে, বালাকোটের বাসিন্দারা ভেবেছিলেন আচমকা ভূমিকম্পে যেন কেঁপে উঠেছে পাকিস্তান। কেউ কেউ শুনেছে বিকট আওয়াজ সঙ্গে তীব্র আলোর ঝলকানি। তারপর ভাঙল ভুল। আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গী গোষ্ঠীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর, ঠিক ১২ দিনের মাথায় এবার পাল্টা দিল ভারত। আর চুপ করে বসে না থেকে পুলওয়ামার জবাব হিসেবে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে পাকিস্তানের ভূখন্ডে থাকা একের পর এক জঙ্গী ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় বায়ু সেনা। সেনা সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ এই হামলা শুরু করে। বায়ুসেনার ১২টা মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান কার্পেট বম্বিং শুরু করে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, যে উদ্দেশ্য নিয়ে হামলা করেছিল ভারত তাতে পুরোপুরি সফল।
সেনা সূত্রের খবর, বালাকোটের যে এলাকায় বিমানহানা হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এখানেই ঘাঁটি গেড়ে লুকিয়ে থাকা আল কায়েদার মাথা ওসামা বিন লাদেনকে খতম করতে সক্ষম হয়েছিল মার্কিন সেনা। বিমানহানার পর পাকিস্তানের বালাকোটের বাসিন্দা ২৫ বছরের যুবক মহম্মদ আজমল বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “প্রথমে বিস্ফোরণের বিকট আওয়াজ। তারপর তীব্র আলোর ঝলকানি। তখনই বুঝেছি বড় কোনও বোমা ফেলা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি, চারিদিকে পোড়া গন্ধ। বেশ কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়ে রয়েছে”।
বালাকোটের পার্শ্ববর্তী গ্রাম মানসেরার বাসিন্দারা বিবিসি উর্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ভোরের দিকে বিকট শব্দ শুনতে পান তাঁরা। তারপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সকাল হতেই ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থলে। স্থানীয় পুলিশকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানিয়েছে, পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিল। এলকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বালাকোটের পড়শি গ্রাম জাবা। সেই গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ আদিল বলেছেন, “ভোর তিনটে নাগাদ কান ফাটানো শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। তখন মনে হল পুরো আকাশটাই যেন মাটিতে ভেঙে পড়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কাও করেছিলাম। তারপর বুঝতে পারি বোমা বর্ষণ হয়েছে”। পাকিস্তানের সরকারি সূত্রে এই বিমানহানার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় বায়ুসেনার এই প্রত্যাঘাতে নিকেশ হয়েছে ৩০০ জঙ্গী। প্রাক্তন সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতীয় বায়ুসেনার। তাঁর কথায়, “ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও বলা সম্ভব নয়। কিন্তু যে ভাবে জইশের সব থেকে বড় ঘাঁটিতে ঢুকে আক্রমণ চালালো ভারতীয় বায়ুসেনা, তা আসলে বায়ুসেনার নিখুঁত পরিকল্পনাকেই সামনে আনছে।’