পুলওয়ামার জঙ্গী হামলার ভয়াবহতায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ। ৪৪ জন জওয়ানের মৃত্যুতে কেঁদে উঠেছেন সবাই। এই চরম শোকের আবহে যারা ইতিপূর্বে হারিয়েছেন তাঁদের ছেলে, স্বামী কিংবা দাদা বা বাবাকে, আবার নতুন করে ফিরে এসেছে সেই শোক। ৪৪ টি পরিবারের স্বজন হারানোর বিলাপে সামিল হয়েছেন তাঁরাও। এই আবহেই দেশের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে শহিদ হওয়া স্বামীকে শ্রদ্ধা জানাতে, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছেন প্রয়াত এক মেজরের স্ত্রী।
২০১৭ সাল। একটি ফোন৷ তারপরেই গৌরী প্রসাদ মহাদিকের জীবন এক লহমায় যায় বদলে৷ ফোনেই স্বামীর শহিদ হওয়ার খবর পান৷ ভারত-চিন সীমান্তে একটি অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা যান মেজর প্রসাদ গণেশ৷ কফিনবন্দি স্বামীর শেষযাত্রার সময়ে স্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, স্বামীর মতোই দেশের জন্য লড়বেন তিনি। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি যে নেহাত আবেগের প্রকাশ ছিল না, তা নিঃশব্দে প্রমাণ করলেন ৩২ বছরের গৌরী মহাদিক।
গৌরী এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের অপেক্ষায়৷ পাশ করেছেন সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের পরীক্ষা৷ শুধু পাশ নয়, তিনি টপ ব়্যাঙ্ক করেছেন৷ খুব তাড়াতাড়ি তিনি অফিসার ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যোগ দেবেন৷ আইন নিয়ে পড়াশুনা করার পর একটি কোম্পানিতে আইনি পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতেন গৌরী৷ স্বামীর মৃত্যুর পর সিদ্ধান্ত নেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন৷ চাকরি ছেড়ে সেনাবাহিনীতে চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন৷ গৌরীর কথায়, “সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বামীকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে চেয়েছিলাম৷ সেই জন্য এই সিদ্ধান্ত৷ তাঁর সেনা পোশাক এখন আমি পড়ব ভেবেই উত্তেজিত লাগছে”৷
গৌরী জানিয়েছেন, শহিদ সেনাদের স্ত্রীয়েরা যদি সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে চান, সে কথা ভেবেই আয়োজন করা হয় এসএসবি পরীক্ষার৷ সেই পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান দখল করেন তিনি৷ আগামী এপ্রিল মাস থেকে চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে শুরু হবে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে, ২০২০ সালের প্রথম দিকে নন-টেকনিক্যাল বিভাগে লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেওয়ার কথা গৌরীর। তিনি ছাড়াও কর্নাটকের বেঙ্গালুরু, উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদ এবং মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে মোট ১৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসবি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। এপ্রিল মাস থেকে তাঁদের ৪৯ সপ্তাহের ট্রেনিং শুরু হবে। স্বামীর কফিন ছুঁয়ে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা এবার সত্যির পথে। দেশের জন্যে নিজেকে সঁপে দিতে এগোচ্ছেন তিনি। কবি শঙ্খ ঘোষের ভাষায়, “বাজে না ডম্বরু, অস্ত্র ঝন্ ঝন্ করে না, জানল না কেউ তা
চলল মেয়ে রণে চলল। পেশীর দৃঢ় ব্যথা, মুঠোর দৃঢ় কথা, চোখের দৃঢ় জ্বালা সঙ্গে নিয়ে চলল মেয়ে রণে চলল…”