রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই শিল্পকে পাখির চোখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সচেষ্ট হয়েছেন শিল্পে বিনিয়োগ এবং শিল্পের উন্নতি নিয়ে। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টা যেমন রাজ্যের ধুকতে থাকা শিল্পকেন্দ্রগুলিতে নয়া প্রাণ সঞ্চার করেছে, তেমনি গড়ে উঠেছে বহু শিল্পতালুকও। আর এবার শিল্পক্ষেত্রে নানা সমস্যার সমাধানে এক ‘মুশকিল আসান’ অ্যাপ এনেছেন তিনি। নাম ‘শিল্পদিশা’। যাতে ইতিমধ্যেই আসতে শুরু করেছে হাজারও অভিযোগ। এবং সঙ্গে সঙ্গেই মিলছে মুশকিল আসানের উপায়।
স্যর, রাইস মিল তৈরি করব। কিন্তু ল্যান্ড কনভারশন হচ্ছে না। অনেক বার ঘুরেছি। কোথায় গেলে সমাধান হবে? প্রেরক বীরভূমের বাসিন্দা। তাঁর সমস্যার কথা লিখে জানিয়েছেন রাজ্য সরকারের কাছে। কালিম্পংয়ের এক ব্যক্তি জানতে
চেয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ব্যবসার জন্য একবার লোন নিয়েছেন। দ্বিতীয়বার কি লোন পাবেন? কেউ আবার জানতে চেয়েছেন কারখানা করার জন্য পলিউশন সার্টিফিকেট পাইনি। অনেকদিন
ঘোরাচ্ছে। কী করব?
অ্যাপ খুলতেই শিল্প সংক্রান্ত এমনই একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করেছে শিল্পদিশাতে। কারো বা জমি সমস্যা, কেউ আবার দূষণের ছাড়পত্র পাচ্ছেন না। আবার কারও কারখানায় বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে না। হাজারো সমস্যা। দিন ১৫-র মধ্যেই প্রায় শ’খানেক অভিযোগ এসেছে এই অ্যাপে। এবং অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে সমাধানও বাতলে দিয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের কর্তারা। উল্লেখ্য, বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চেই রাজ্যের শিল্পপতিদের সমস্যার সমাধানে এই নয়া অ্যাপের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শিল্পদিশা নামটিও তিনিই দিয়েছিলেন।
রাজ্যে কারখানা তৈরি করতে বা শিল্পে বিনিয়োগে কোন সমস্যায় পড়লে এই অ্যাপে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন যে কেউ। মিলবে চটজলদি সমাধান। মানে যে সমস্যায় অভিযোগকারী পড়েছেন কোথায় গেলে তার সমাধান মিটবে, এই অ্যাপেই তাকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি এই কন্ট্রোল থেকে সজাগ করে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকেও। যাতে অভিযোগকারী সেখানে গিয়ে দ্রুত সুরাহা পান।
কীভাবে হদিশ মিলবে এই অ্যাপের? জানা গেছে, গুগল প্লে স্টোরের সার্চ অপশনে শিল্পদিশা লিখে খুঁজলেই মিলবে এই অ্যাপ। যা যে কেউই ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। দিন পনেরাে আগে থেকে মূলত কাজ শুরু করেছে এই অ্যাপ। আর তার মধ্যেই জমা হতে শুরু করেছে একাধিক অভিযোগ। সঙ্গে নানাবিধ প্রশ্নও। আপাতত দিনের বেলাতেই এই অ্যাপের দায়িত্বে রাখা হচ্ছে আধিকারিকদের। তাঁরা সর্বক্ষণ নজর রাখছেন এবং উত্তর দিচ্ছেন প্রশ্নকর্তার। তবে অদূর ভবিষ্যতে ২৪ ঘণ্টার জন্যই লোক নিয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে।
দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, কারখানা বা কোথাও কোনও বিনিয়োগ করতে গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হয় বিনিয়োগকারীকে। ইলেকট্রিসিটি থেকে পলিউশন, জমির মাপজোক থেকে জলের ছাড়পত্র, সবকিছু আনতেই দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় তাঁকে। কী কী লাগবে তা না জেনেই সংশ্লিষ্ট দফতরে যাওয়ায়, এক জায়গায় একাধিকবার ছুটতে হয়। কিন্তু এই অ্যাপে আগে থেকে সমস্যার কথা জানালে দফতর থেকে সরাসরি ওই প্রশ্নকর্তাকে কী কী নিয়ে কোথায় কোথায় যেতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যাবে।