পুলওয়ামার জঙ্গী হামলায় শহীদ ৪৪ জওয়ানের মধ্যে ছিলেন দুই বাঙালিও। রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দুই শহীদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতোই শুক্রবার নদিয়ায় শহীদ সুদীপ বিশ্বাসের বাবা-মায়ের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরিও পাবেন পরিবারের একজন। আবার শহীদ জওয়ানের নামে এলাকার একটি রাস্তার নামকরণের কথা জানিয়েছেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডু।
গত বুধবার নবান্ন থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের সামনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলওয়ামা হামলায় মৃত ২ জওয়ান বাবলু সাঁতরা ও সুদীপ বিশ্বাসের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা সাহায্য দেবে রাজ্য সরকার। সঙ্গে চাইলে তাঁদের পরিবারের ১ জন করে সদস্যকে চাকরিও দেওয়া হবে।’ তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তার তুলনায় সাহায্য নিতান্তই নগণ্য। আসলে মাত্র সাতাশ বছর বয়সেই শহীদ হয়েছেন নদিয়ার পলাশিপাড়ার সিআরপিএফ জওয়ান সুদীপ বিশ্বাস। হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়ার বাড়িতে থাকেন তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা। একমাত্র বোন বিবাহিত। সুদীপই তাঁর বিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার শহীদ জওয়ানের বাড়িতে যান রাজ্যের দুই মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ও রত্না ঘোষ, স্থানীয় বিধায়ক তাপস সাহা এবং নদিয়া জেলা পরিষদের সভাপতি রিক্তা কুণ্ডু। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সুদীপ বিশ্বাসের বাবা-মায়ের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা চেক তুলে দেন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁদের কোনওরকম সমস্যা হচ্ছে কিনা, সে বিষয়েও খোঁজ খবর নেন তিনি। শহীদ পরিবারের জামাই সমাপ্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, মন্ত্রীর সঙ্গে পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া বিষয়ে কথা হয়েছে।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার শহীদ হয়েছেন হাওড়ার বাউরিয়ার বাবলু সাঁতরাও। বৃহস্পতিবার সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে দুই মন্ত্রী অরূপ রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন বাউরিয়ার চককাশী গ্রামে তাঁর বাড়িতেও। শহীদ সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু সাঁতরার মাকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়েছেন তাঁরা। চাকরির ক্ষেত্রে নিহত জওয়ানের স্ত্রীর পছন্দের বিষয়টি জেনে নিয়েছেন দুই মন্ত্রী। বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতাদেবী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস স্নাতকোত্তর। তিনি জানিয়েছেন, যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোনও কাজই করতে রাজি তিনি। তবে বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি ও শিশুসন্তানের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় এলাকায় চাকরি দিলে সুবিধা হয়।
আবার, বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শহীদের ভাই কল্যাণ সাঁতরা। তিনি বলেছেন, ‘বিপদের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহমর্মিতায় আমরা কৃতজ্ঞ। পরিবারে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কোনওদিনই পূরণ হবে না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর থেকে এই আর্থিক সহায়তা পেয়ে সংসারে অনেক সুরাহা হবে’। সেইসঙ্গে প্রশাসনের কাছে শহীদের ভাইয়ের আবেদন, ‘আগামী দিনে যাতে আর কোনও পরিবারে এমন বিপর্যয় নেমে না আসে, তা সুনিশ্চিত করতে সবরকম পদক্ষেপ করা হোক’।