উত্তরপ্রদেশের গুমনামি বাবাই কি নেতাজি? তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা মত রয়েছে। আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তবে গুমনামি বাবাই নেতাজি, এই প্রচলিত দাবিকে সঠিক বলে মেনে না নিয়ে তদন্ত হোক, সম্প্রতি সেরকমই চাইছে নেতাজির পরিবারের একাংশ। পরিবারের গুটিকয়েক সদস্যের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যথার্থ প্রমাণ ছাড়াই ‘মিশন নেতাজি’ নামের এক বেসরকারি সংস্থা দাবি করছে ফয়জাবাদের গুমনামি বাবাই আসলে সুভাষ চন্দ্র বোস। তাঁদের দাবি নেতাজির ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই ‘অশুভ প্রচার’ চালাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা। পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে যাতে নেতাজী সংক্রান্ত ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ফাইল প্রকাশ্যে আনা হয়।
বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে নেতাজির প্রপৌত্র তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি চন্দ্র বসু বলেন, ‘১৯৫০ থেকে তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে বাস করা গুমনামি বাবাকে নেতাজি হিসাবে তুলে ধরে বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে নেতাজির ভাবমূর্তিকে অসম্মান করার একটা অশুভ প্রচার চলছে। কিন্তু ঘটনা হল, গুমনামি বাবা নেতাজি নন।’ শুধু তাই নয়, তিনি দাবি করেন, সত্যকে সামনে আনতে গুমনামি বাবা সম্পর্কিত সমস্ত গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করা হোক।
এদিকে, গত ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনে তাঁর পরবর্তী ছবি ‘গুমনামি’র ফার্স্ট লুক প্রকাশ করেন পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। যে ছবির কেন্দ্রে থাকছেন গুমনামি বাবা। প্রসঙ্গত, তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭০ সাল নাগাদ উত্তর প্রদেশে আর্বিভাব ঘটে গুমনামি বাবার। অনেকে বলতে শুরু করেন, এই বাবা আসলে সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁর সঙ্গে নেতাজীর আদলের মিল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে বলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের কিছু চিঠিপত্রও পাওয়া গিয়েছে তাঁর কাছে। যা নিয়ে অর্জুন ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষ ‘কোনানড্রাম’ নামে একটি বই লেখেন। সেই বই থেকেই অনুপ্রাণিত সৃজিতের এই ছবি। জানা গেছে, ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
সৃজিতের সেই চলচ্চিত্র নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল চন্দ্র কুমারের। গতকাল প্রেস ক্লাবে ওই সাংবাদিক সম্মেলনে চন্দ্র বসু এই ছবির তথ্যের সত্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন। তাঁর অভিযোগ, ‘গুমনামি বাবা’কে কোনও ছবি অথবা তথ্য প্রমাণ ছাড়া সুভাষ চন্দ্র বসুর ছদ্মবেশ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সৃজিত। তিনি বলেন, ‘ওই সিনেমায় সিনেমায় নেতাজিকে কেন জীবিত করে তুলে ধরা হচ্ছে? যদি সে রকম হত, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে অবশ্যই তথ্য থাকত। সব কিছুর প্রমাণ নিয়ে কথা বলা উচিত। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে ৷’ তবে এখানেই না থেমে সৃজিতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চন্দ্র বলেন, ‘এই সিনেমা তৈরি করলে কলকাতায় থাকতে পারবেন না। আমি কেন গোটা দেশ এ সব মেনে নেবে না।’
এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চন্দ্রবাবুকে পাল্টা দিতে সৃজিত লেখেন, ‘ফেসবুক, টুইটারে অনেকেই বসু পরিবারের একাংশের বিরুদ্ধে জোর গলায় কথা বলেন৷ ওঁরা আমাদের জাতীয় নেতাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো রাখার চেষ্টা করেন৷ অন্যদিকে, ওই পরিবারেরই অনেকে গুমনামি বাবার মতো তত্ত্বে বিশ্বাসও করেন।’ তিনি আরও লেখেন যে, ‘গুমনামি বাবাকে নেতাজি হিসাবে দেখাব কি দেখাব না এই সংক্রান্ত কোনও প্রতিশ্রুতি আমি চন্দ্রবাবুকে দিইনি। আমি বলেছি, সুভাষ চন্দ্রের শেষের দিনগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে এবং নির্দিষ্ট তত্ত্বের ভিত্তিতেই ছবিটা তৈরি হবে। এছাড়াও মুখার্জী কমিশনের তথ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভর করা হচ্ছে।’
এরপরেই সরাসরি চন্দ্রবাবুর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন সৃজিত৷ লেখেন, ‘যদি আপনি আমাকে কোর্টে নিয়ে যান, তাহলে আমি প্রডাকশন ডিজাইন ধার করে ছবি বানাব৷ যদি আপনি আমাকে জেলে নিয়ে যান সেখানেও আমি ড্রাফ্ট বানাব, আর ফিরে এসে ছবি করব। স্পষ্ট করে বললে, এই ছবিটা তৈরি হবেই ৷ আর যদি আপনি আর আপনাদের পরিবারের কিছু সদস্য অস্বস্তিতে পড়েন, তাহলে আরও সাংবাদিক বৈঠক ডাকতে পারেন৷’ এ বিষয়ে চন্দ্র বসুও একটি টুইট করেন। সৃজিতের সাফ জবাব, ‘আমি এই দেশের নাগরিক এবং আমি এই সিনেমা তৈরি করবই। আপনার সঙ্গে দেখা হবে ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে সিনেমার প্রিমিয়ারে।’