ভালোবাসার দিনে রক্ত ঝরেছে কাশ্মীরের পুলওয়ামায়। আত্মঘাতী জঙ্গী হামলায় শহীদ হয়েছেন ৪৪ সিআরপিএফ জওয়ান। ঠিক সেই মুহূর্তে, তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভয়াবহ হামলার খবর পাওয়ার পরেও বন্ধ হয়নি তাঁর ক্যামেরা। আর ঠিক সেই মুহূর্তে, বাংলায় নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। তৎক্ষণাৎ জঙ্গী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে দাঁড়িয়েছেন শহীদদের পরিবারের।
ভ্যালেন্টাইন ডে-র দুপুরে এই ভয়াবহ জঙ্গী হামলার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল সাড়া দেশে। শোক বিহ্বল হয়ে পরেছিলেন দেশবাসী। একটু সামলে উঠে গরল উগড়ে দিতে শুরু করেছিল পাকিস্তানের ওপর। ঠিক সেই মুহূর্তে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহরা ব্যস্ত ছিলেন নির্বাচনী প্রচারে। মৃত জওয়ানদের নিয়ে তৈরি আবেগকে ভোট বাক্সে নিয়ে যাওয়ার কৌশলী প্রচার শুরু করেছিলেন। সারা দেশে ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ রব জাগিয়ে তুলেছিলেন।
ঠিক সেই মুহূর্তে, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন শান্ত এবং দৃঢ়। প্রথমেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজন করেছেন মোমবাতি মিছিলের। রাজ্যে তখন মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই দিকে খেয়াল রেখে মিছিলে কোনও মাইক রাখেননি তিনি। কিন্তু সংকল্পে তিনি স্থির। নিজে নেমেছেন রাস্তায়। হাজার হাজার মানুষ নিয়ে হাজরা থেকে গান্ধী মূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত মিছিল সংঘটিত করেছেন। রাজ্যের প্রতি ব্লকে যাতে এইভাবেই তৃণমূল কর্মীরা মিছিল করে শহীদদের প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করেন, তা নিশ্চিত করেছেন।
এরপর জনমত একত্রিত করেছেন। নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দেশবাসীকে বুঝিয়েছেন একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধ করতে যাওয়া বোকামি। তারচেয়ে ঘর সামলানো আগে দরকার। যে গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটল সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একইসঙ্গে বিশেষ রাজনৈতিক দলের তৈরি ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ আবহাওয়া থেকে বাঁচাতে রাজ্যবাসীকে সাবধান করেছেন। কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনকে। যুদ্ধ উন্মাদদের হাত থেকে বাঁচাতে শুধু বাংলাকে নয়, গোটা দেশকে সচেতন করেছেন।
এসবের সঙ্গেই শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলওয়ামায় নিহত ৪৪ জওয়ানের মধ্যে আছেন দুজন বাঙালিও। ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি পরিবারের একজনের চাকরি ব্যবস্থা করেছেন। এমন দুঃসময়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই সহমর্মিতায় মমতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শহীদের পরিবার।
এটাই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফারাক। একপক্ষ যুদ্ধের নামে বল্গাহীন উন্মাদনা ছড়াতে ব্যস্ত। যার আঁচ এসে পরেছে বাংলাতেও। আর মমতা সেসবের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। শুধু বাংলাকে নয়, রক্ষা করছেন দেশকে। লড়েছেন যুদ্ধবাজ মানসিকতা, কুৎসা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে। সঙ্গে নিয়েছেন সঠিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। থেকেছেন শহীদ জওয়ান এবং রাজ্যবাসীর প্রতি কর্তব্যে অবিচল।