মেদিনীপুর, খড়গপুর, ঘাটাল, দাসপুর, বেলদা, চন্দ্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছে অটো। কোনওটায় লেখা ‘গুজব ছড়াবেন না’, কোনওটায় লেখা ‘গুজব শুনে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাবেন না’। অটো, টোটোর পেছনে বাঁধা ফ্লেক্স। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ভুয়ো খবর ও ধর্মীয় বিদ্বেষ রুখতে জেলায় জেলায় এমনই সব প্রচারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। তাতে কাজও হচ্ছে।
পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার আগে থেকেই গুজবের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনি ও হিংসা ছড়ানো হচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা ও কলকাতা পুলিশ কোমর বেঁধে নেমেছে এই ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে। মাইকে প্রচার করা হচ্ছে এবং লিফলেটও বিলি করা হচ্ছে। এর ফলে অনেকটা সুফল মিললেও এখনও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটছেই। মঙ্গলবার রাতে যেমন কলকাতার আনন্দপুর থানা এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে একজনকে মারধর করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে দেগঙ্গায়।
অন্যদিকে, বেহালায় এক কাশ্মীরি শাল বিক্রেতার ওপরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে থানা থেকে সচেতনতার প্রচার চালানো হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে মনগড়া মেসেজ, ভুল তথ্য এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্রব নেই এমন সমস্ত ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মোকাবিলা করছে।
কাশ্মীর থেকে আসা জনৈক শাল ব্যবসায়ীর ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটেছে দিন চারেক আগে বেহালা থানা এলাকায়। ওই অঞ্চলের রাজা রামমোহন রায় রোডের বাসিন্দা দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়িতে ৭ বছর ধরে এসে থাকেন কাশ্মীর থেকে শাল বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীরা। ঘটনাচক্রে দেড় মাস আগে শাল ব্যবসায়ীদের একজন রইস আহমেদ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ভারতীয় সেনা সম্পর্কে কিছু কথা লিখেছিলেন। জানতে পেরে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা এসে ওই বাড়িতে গোলমাল পাকায়। রইসকে মারধর করে।
কাশ্মীরের পুলওয়ামার ঘটনার পর, দিন পাঁচেক আগে আরও কিছু লোকজন এসে তাঁর ওপর হামলা চালায়। অভিযোগ, ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে বলেছে সে। বেহালা থানার পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রইস জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে একটি পোস্ট দেয়। এবং তাতে রইসকে ট্যাগ করে। তখন রইস তাঁকে বলে, শিগগির এই পোস্ট তুলে নাও। না হলে কাশ্মীরে আমি সমস্যায় পড়ব। এরপর নিজের কিছু কথাও ফেসবুকে লিখেছিল সে। এ কারণেই তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। জানা গেছে, রইসের দুটি মোবাইল এবং দু লক্ষ টাকা, এবং কাপড় লুঠ করে নেওয়া হয়েছে।
আনন্দপুর থানা এলাকা চীনা মন্দিরের কাছে মঙ্গলবার রাতে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে পাড়ায় দেখে স্থানীয় কিছু মানুষ হঠাৎ ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি পাশের পাড়ায় থাকে। পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিকে, দেগঙ্গার চাঁদপুর এলাকায় বুধবার ছেলেধরা সন্দেহে এক যুবককে ধরে স্থানীয়রা গণপিটুনি দেয়। দেগঙ্গা থানার পুলিশ গিয়ে জনরোষের হাত থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভবঘুরে ওই যুবকটি ছেলেধরা নয়। স্থানীয়রা ছেলেধরা সন্দেহেই তাকে মারধর করে এদিন। ওই ভবঘুরে যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় চলছে পুলিশি টহল। বৃহস্পতিবার চাঁপাতলা পঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরি জানান, ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয়দের মধ্যে একটা গুজব ছড়িয়েছিল ঠিকই, তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।