বাণিজ্যনগরীতে লোকাল ট্রেনেই মানব অঙ্গের ‘ফেরি’। প্রতিস্থাপনযোগ্য লিভার ৩১ কিলোমিটার হাসপাতালে পৌঁছে গেল একেবারে মসৃণ গতিতে, কোনও জটিলতা ছাড়াই।
মুম্বই-এর ‘জীবনরেখা’ নামে পরিচিত লোকাল ট্রেনে চেপেই থানে থেকে দাদার পাড়ি দিল উলহাসনগরের ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর লিভার। লাল রঙের ‘আইস বক্সে’ রাখা সেই যকৃৎ ৩১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করল মাত্র ৩৮ মিনিটে। তারপর আরও ২০ মিনিট সময় লাগল তাকে ‘গ্রিন করিডর’ এর মাধ্যমে তার প্রকৃত গন্তব্য অর্থাৎ পারেলের গ্লোবাল হসপিটালে পৌঁছে দিতে। মরণাপন্ন অন্য যে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এই বড় ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল, দিনশেষে তা সফল হওয়ায় খুশি সকলেই।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আর তারপরই থানের জুপিটার হাসপাতালের সেই ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে তাঁর যকৃৎটি দান করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যাঁর দেহে সেই লিভার প্রতিস্থাপিত হবে, সেই মানুষটি তো ভর্তি রয়েছেন ৩১ কিলোমিটার দূরে দাদারের এক হাসপাতালে। দ্রুত সেখানে পৌঁছতে না পারলে উদ্যোগটাই বৃথা।
শুক্রবারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে রবিবার। বুধবার এক বাইক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হন উলহাসনগরের বাসিন্দা, ৫৩ বছরের এক সমাজকর্মী। শুক্রবার তাঁর মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে পরিবারের সম্মতিতে তাঁর যকৃৎ অন্য কারও দেহে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসপাতালের বিবৃতি অনুযায়ী, ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে দাদার গেলে অনেক দেরি হয়ে যেত। তাই বেছে নেওয়া হয় লোকাল ট্রেনকে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রোপচার করে মানবদেহ থেকে বের করে আনা যকৃৎ সর্বাধিক ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সে কথা মাথায় রেখেই ট্রেনে দাদার পৌঁছনোর পর যকৃৎটি সংগ্রহ করে অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে যথাস্থানে পাঠিয়ে দিতে মুহূর্তখানেকও দেরি করেননি পুলিশ এবং রেল আধিকারিকরা। মুম্বইয়ের এই ঘটনা ফের স্পষ্ট করে দিল, ইচ্ছে থাকলে উপায় ঠিক বেরোবেই।