আশা দেখিয়েও এবার সেই আশায় জল ঢেলে দিল মোদী সরকার। বলা হয়েছিল, দেশের প্রথম সেমি হাইস্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (ট্রেন-১৮) ছুটবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। তবে এখন বলা হচ্ছে প্রথম থেকেই ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে না ওই ট্রেন। বদলে আপাতত তার সর্বাধিক গতিবেগ বেঁধে দেওয়া হবে শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতোই। অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ১৩০ কিলোমিটার।
শতাব্দী এক্সপ্রেসের বদলে ট্রেন-১৮ এর ঘোষণার সময়ই রেল জানিয়েছিল, এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্পিড বা গতি। দেশের সবথেকে দ্রুতগামী ট্রেন এটি। কিন্তু সর্বোচ্চ গতিতে যদি নাই ছোটে, তাহলে এত ঘটা করে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধনের অর্থ কী, সেই প্রশ্নই উঠছে। এমনকি রবিবার নয়াদিল্লী থেকে বারাণসী পর্যন্ত প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রায় ট্রেন-১৮ লেট করেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। একমাত্র কারণ, এর অল্প গতি। যাত্রাপথের কিছু অংশে গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারও পেরয়নি।
রেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, শুধুমাত্র নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটারে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ যে রুটে এই সেমি হাইস্পিড ট্রেন ছুটছে, সেই নয়াদিল্লী থেকে বারাণসী পর্যন্ত মোট ৭৭৬ কিলোমিটার পথের পুরোটাই ঘিরে দেওয়া হবে ‘ফেন্সিং’ দিয়ে। যাতে এই ট্রেনের যাত্রাপথে আচমকা গবাদি পশু, কিংবা মানুষ অথবা অন্য কোনও বাধা চলে না আসে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর আগেই কেন এই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ মিটিয়ে নেওয়া হল না? রেল সূত্রের খবর, ট্রেনের যাত্রাপথে ফেন্সিংয়ের কাজ একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই এই কাজের জন্য টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বড়জোড় বছরখানেকের মধ্যেই ট্রেন ১৮ এর যাত্রাপথ ঘিরে দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লী স্টেশনে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধনী যাত্রাতেও ট্রেনটির গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ১২৯.৬ কিলোমিটার।
আর গতকাল বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রাতেও এহেন সেমি হাইস্পিড ট্রেন-১৮ প্রায় দেড় ঘণ্টা লেট করে বারাণসী পৌঁছেছে। রেলমন্ত্রকের ডিরেক্টর (ইনফর্মেশন অ্যান্ড পাবলিসিটি) রাজেশ ডি বাজপেয়ি জানিয়েছেন, মূলত কুয়াশার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকলে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানোই যায় না।
রেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, কুয়াশার কারণে ট্রেন যাতে লেট না করে, সেই প্রযুক্তির ব্যবহার ট্রেন ১৮ এর ক্ষেত্রেও হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কুয়াশার কারণে এই ট্রেনকে আজ এত সমস্যায় পড়তে হল কেন, প্রত্যাশিতভাবেই সেই প্রশ্ন উঠছে। শুধুমাত্র ভোটের চমক দিতেই উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়া তড়িঘড়ি করে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালিয়ে দেওয়া হল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও। তবে এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে মন্ত্রক।