দুর্বার গতিতে পেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক স্টেশন। দিল্লী থেকে বারাণসীর দিকে ছুটে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’। প্ল্যাটফর্ম, রাস্তা, রেল লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বত্র সেই একই দৃশ্য। এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে দাঁড়িয়ে কাতারে কাতারে মানুষ। এঁদের মধ্যে কেউ মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত, কেউ আবার মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রেনের সঙ্গে সেলফি তোলার। তবে এই মুগ্ধতার মধ্যেও উচ্চগতির এবং অতি উচ্চ ভাড়ার এই ট্রেন চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শোনা গেল উপস্থিত মানুষকে। প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রীর নিজের কেন্দ্র বারাণসীতেই কেন চালু হল এই ট্রেন?
তখন সকাল। নয়াদিল্লী স্টেশন থেকে ‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে’র যাত্রা শুরুর আরও কয়েক ঘণ্টা বাকি। সাতসকালেই প্রশ্নটা তুলেছিলেন দিল্লীর গাড়িচালক রাজকিশোর। এই ট্রেন আট ঘণ্টায় দিল্লী থেকে বারাণসী পৌঁছাবে শুনে খানিকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘গাড়ি সে হম ১০ ঘণ্টে মে পৌঁছা দেঙ্গে।’ রাজকিশোরের কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল কানপুর স্টেশনে ট্রেন দেখতে জমা হওয়া কয়েকজনের মুখে। বেশিরভাগই অবশ্য ভারতীয় জনতা পার্টির সমর্থক। হাতে পতাকা নিয়ে মুখে ‘বন্দে ভারত’ স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা।
ভারতীয় রেল জানাচ্ছে, সরাসরি দিল্লী ও বারাণসীর মধ্যে যাতায়াত করার মতো অন্তত এক ডজন ট্রেন রয়েছে। যদিও কোনও ট্রেনই ১২ ঘণ্টার আগে বারাণসী পৌঁছয় না। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ট্রেন ক্যাপ্টেন রমেশ কুমার নিজেই পূর্বা এক্সপ্রেসের সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাজ করেছেন বেশ কয়েক বছর। তিনি বলেন, ‘খাতায় কলমে ১০ ঘণ্টার কথা বলা হলেও এই দূরত্ব পার করতে ১২-১৩ ঘণ্টা লেগেই যায়। সেই জায়গায় এই ট্রেন অনেকটাই সময় বাঁচিয়ে দেবে।’ উত্তর ভারতের এই অংশ কুয়াশার জন্য কুখ্যাত। সেখানে এই ট্রেন কী ভাবে ব্যতিক্রম হবে, সে প্রশ্নও উঠছে।
কেন বারাণসী থেকে প্রকল্পটি চালু হল? এই প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল অবশ্য বলেন, ‘যে কোনও প্রকল্পই তো কোনও না কোনও কেন্দ্র থেকেই শুরু করতে হয়। এই ট্রেন তো আমাদের আধ্যাত্মিক রাজধানী প্রয়াগ এবং প্রাচীনতম নগরী বারাণসীকে একসূত্রে বেঁধেছে।’ অন্যদিকে, কানপুর স্টেশনে দাঁড়ানো রঘুবীর ট্রেনের ভাড়া জানতে চাইলেন প্রথমে। ভাড়া শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবাক। শেষে বলেই ফেললেন, ‘এত টাকা দিয়ে এই ট্রেনে কে চাপবে? এতে সাধারণ মানুষের লাভ হবে না।’ ভুল বলেননি তিনি। এই ট্রেন সাধারণের সুবিধা করে দেওয়ার ট্রেন নয়।