রাজীব কুমার ইস্যুতে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলে দেশের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় গত রবিবার রাত থেকে ধর্নায় বসে যে আওয়াজ তুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গোড়া থেকেই তা তামাম দেশের বিরোধী দলের মিলিত কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছিল। উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারত, কে ছিলেন না মোদি বিরোধী সেই কোরাসে। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদব, আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব, তাঁর পুত্র তেজস্বী যাদব, দক্ষিণের এম কে স্ট্যালিন, কানিমোজি, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর। আবার বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি আর বিদ্রোহী শত্রুঘ্ন সিনহাও মোদি-শাহ বিরোধী মমতার আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে নৈতিক জয় পেতেই মহাজোটের অনুরোধ মেনে ধর্না প্রত্যাহার করেছিলেন মমতা। তবে ধর্নামঞ্চ থেকেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন— কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে এ বার লড়াই হবে রাজধানীতে। আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই দিল্লী যাবেন তিনি। ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লীতেই হবে মহাজোটের ধর্না। মমতার সেই ঘোষণার পরেই জাতীয় স্তরে সমস্ত বিরোধী দলগুলি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সেই প্রতিবাদ সমাবেশের। মমতা ছাড়াও সেখানে থাকবেন কংগ্রেস টিডিপি, আরজেডি, এসপি, বিএসপি ও এনসিপি-র শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিবাদ ধর্নায় স্লোগান হবে— ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সংবিধান, গণতন্ত্র এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বাঁচানোর লড়াইয়ে সবাই একজোট হোন।’
অন্যদিকে, তৃণমূল সুপ্রিমোর ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’-এর সাফল্যকেই ‘মডেল’ করে দিল্লীতে মোদি বিরোধী লড়াইকে আরও তুঙ্গে নিয়ে যেতে চাইছে বিরোধীরা। শুধু মডেল করাই নয়, ধর্নার রূপকার মমতাকে সামনে রেখেই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াতে তৎপর হয়েছে বিরোধী শিবির। জানা গেছে, প্রতিবাদ ধর্নার দু’দিন সিবিআই-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থের অভিযোগ সমাবেশে তুলবেন মমতা-সহ ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার নেতা-নেত্রীরা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার যখন মমতার আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে ধর্মতলার ধর্না মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তখনই তিনি জানিয়ে দেন, ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার স্থপতি মমতাই। এবার শুধু কলকাতাই নয়, দিল্লী-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একযোগে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে লড়াই চালাবে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া।
বুধবার নবান্ন থেকে বেরনোর সময় মমতা জানান, এবার লড়াই শুরু দিল্লীর বুকে। এআইসিসি’র সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট বঢড়াকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে মমতা বলেন, বিজেপি নির্বাচনের আগে ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিধি পাঠাব। যাদের এক্সপায়ারি ডেট আর ১৫-২০ দিনের, তারা এখন নির্বাচনের মুখে কী করে বিরোধী দলগুলিকে নোটিস পাঠায়? কোনও গুরুতর মামলা নয়। সাধারণ মামলায় এমনি এমনি নোটিস পাঠাচ্ছে এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ধারা দেওয়া হচ্ছে। বৃহত্তর ষড়যন্ত্র কী? এটা একটা ভুল শব্দ!’ পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, বিরোধীরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এভাবে ঐক্য ভাঙা যাবে না।