রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নতি নিয়ে সচেষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আমলে রাজ্যে একদিকে যেমন কৃষির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তেমনই গত কয়েক বছরে বাণিজ্যেও প্রসার ঘটেছে। শুধু তাই নয়, বিনিয়োগের প্রস্তাবও এসেছে বিভিন্ন বাণিজ্য মহল থেকে। উন্নয়নের জোয়ার রাজ্যের সর্বত্রই। আর সেই উন্নয়নের পথ ধরেই আজ, বৃহস্পতিবার থেকে বাংলার সবচেয়ে বড় শিল্প সম্মেলন ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ শুরু হতে চলেছে নিউ টাউনের কনভেনশন সেন্টারে। বিনিয়োগের বার্তা নিয়ে এর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। এদিন নবান্নে তিনি বলেন, ‘৩৪টিরও বেশি দেশ যোগ দিচ্ছে এবারের বাণিজ্য সম্মেলনে। ওই সব দেশের গভর্নর ও শীর্ষ পদাধিকারীরা আসছেন। সবার সঙ্গেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করব। বিনিয়োগ নিয়েও আলোচনা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর এই বাণিজ্য সম্মেলন থেকেই ১০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল রাজ্যে। তার মধ্যে অন্তত ৫ লক্ষের প্রস্তাব বাস্তবায়িত করার সরকারি উদ্যোগ থেমে নেই। এবারের বাণিজ্য সম্মেলনকে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তার কারণ, একদিকে মোদী সরকারের লাগাতার ‘কুৎসা–অপপ্রচার’ বাংলার বিরুদ্ধে, অন্যদিকে মমতার রাজ্য জুড়ে উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড। যা আকৃষ্ট করেছে বিনিয়োগকারীদের। এ প্রসঙ্গে মমতার সাফ কথা, ‘গুজরাটে প্রচুর বিনিয়োগের ঘোষণা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত আর হয় না। আমাদের এখানে আনন্দের কথা হল, যা আমরা ঘোষণা করি, তা কার্যকর করে দেখাই।’ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত বছর ওই বিনিয়োগ প্রস্তাবের ৫০ শতাংশ প্রকল্প ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন উপলক্ষে সারা শহর ইতিমধ্যে সেজে উঠেছে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ফ্লেক্সের মাধ্যমে। শিল্প সম্মেলনের প্রচারের জন্য হোর্ডিং, তোরণ তৈরি হয়েছে। শুধু এদেশের নয়, সম্মেলনে উপস্থিত হচ্ছেন বিদেশের বহু রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রদূত ও লগ্নিকারীদের পক্ষে মালিক-প্রতিনিধিরাও। ছোট ও মাঝারি উদ্যোগপতিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সম্মেলনে। জানা গেছে, ‘পার্টনার-কান্ট্রি’ হিসেবে বাংলাদেশ, চীন, জাপান, ব্রিটেন, আমেরিকার মতো ১২টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকছেন। বড়মাপের শিল্পপতিদের মধ্যে মুকেশ আম্বানি, আদি গোদরেজ-সহ আরও বেশ কয়েকজন আসছেন সম্মেলনে যোগ দিতে। এ ছাড়াও জিন্দাল, জি ইত্যাদি শিল্পগোষ্ঠীর শীর্ষ কর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রের কোনও প্রতিনিধি আসবেন কি না, সে ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ওঁরা কেন আসেন না, সেটা ওঁদের সমস্যা, আমাদের নয়। কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে যে সম্পর্ক, তা আমরা সুষ্ঠুভাবে পালন করে থাকি। ওঁদেরও আমন্ত্রণ করা হয় প্রতিবছরই। এই সাংবিধানিক নিয়ম আমরা রক্ষা করি। না এলে সেটা ওঁদের ব্যাপার। আমাদের সমস্যা নয়।’ উল্লেখ্য আজ এবং কাল, শুক্রবার—মোট দু’দিন চলবে এই শিল্প সম্মেলন, যাতে বাংলায় লগ্নি টানা এবং রাজ্যের উন্নয়নের চেহারাটা তাঁর ভাষণের মাধ্যমে আরও একবার দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরবেন মুখ্যমন্ত্রী।