ক্ষমতায় এসে শিল্পের উন্নয়নে প্রভূত নজর দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর হাত ধরেই বাংলার শিল্পে এসেছে জোয়ার৷ এই কথা যে ভুল নয় তা প্রমাণ হল গতকালের রাজ্য বাজেটে৷ রাজ্য সরকার যে আর্থিক সমীক্ষা সোমবার পেশ করেছে, তাতে শিল্প দফতর জানিয়েছে রাজ্যে যে শিল্প পার্ক বা তালুকগুলি আছে, সেখানে চলতি আর্থিক বছরে এখনও পর্যন্ত ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
এবারের সমীক্ষায় সরকার জানিয়েছে, বিগত চার বছর ধরে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট হয়েছে, সেখানে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের অন্তত ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন হতে শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছর বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট থেকে রাজ্য সরকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছিল ২ লক্ষ ১৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকার। সেবার অবশ্য বিনিয়োগ প্রস্তাবের সিংহভাগ দখলে রেখেছিল উৎপাদন ও নির্মাণ শিল্প। সেই অঙ্ক ছিল ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮১১ কোটি টাকার। এরপরই ছিল ছোট ও মাঝারি শিল্প। সেখানে প্রস্তাব আসে ৫২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগের। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ বিকাশের মতো ক্ষেত্রগুলি মিলিয়ে সামগ্রিক বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ১ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার।
রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম ইতিমধ্যেই হাওড়ায় দু’টি ফুড পার্ক চালু করেছে। সাঁকরাইলে তৃতীয় পর্যায়ের ফুড পার্কটি তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এছাড়াও বজবজে তৈরি হতে চলেছে গার্মেন্ট পার্ক, যেখানে ৯.৮৫ একর জায়গাজুড়ে ৭.২ লক্ষ বর্গফুটের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। সেটিও করছে শিল্পোন্নয়ন নিগম। গোয়ালতোড়ে ৯৫০ একর জমিতে যে শিল্পতালুক গড়ার প্রস্তাব ছিল, সেটি তৈরি করতে পূর্ত দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য। এছাড়াও হরিণঘাটায় ৩৫৮ একরের শিল্প তালুক গড়া হবে বলে জানিয়েছে তাঁরা।
রাজ্যে যে শিল্প পার্ক বা তালুকগুলি আছে সেই পার্কগুলিতে জমি নিয়ে ১০টি সংস্থা লগ্নি করতে চায়। অন্যদিকে জমি নয়, পার্কের মধ্যে শেডের নীচে জায়গা নিয়ে শিল্প গড়ার প্রস্তাব এসেছে, এমন সংস্থার সংখ্যা তিনটি। সেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ১৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারে ৩১৪ কোটি টাকার লগ্নি করতে চায় চারটি সংস্থা। আরও ২১টি সংস্থা লগ্নির প্রস্তাব দিলেও, সেই সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজ চলছে বলে জানিয়েছে শিল্প দপ্তর। অর্থাৎ রাজ্যের শিল্প তালুকগুলিতে এক বছরে প্রায় ২ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার শিল্প প্রস্তাব এসেছে।