সিবিআই ও কলকাতা পুলিশের দ্বৈরথের ফলাফল কী হয়, তা জানতে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্টের দিকেই নজর ছিল গোটা দেশের। অবশেষে সুপ্রিম রায়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে বেনজির সিবিআই হানার ঘটনায় রাজ্য বনাম কেন্দ্র মামলায় প্রাথমিকভাবে ধাক্কা খেল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্ট জানাল, রাজীব কুমারকে সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে হবে, তবে নিরপেক্ষ কোনও জায়গায়। কিন্তু তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না।
পাশাপাশি শীর্ষ আদালত জানাল, আদালতে হাজির হতে হবে রাজ্যের মুখ্যসচিব, রাজ্যের ডিজি এবং রাজীব কুমারকে। তাঁদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে সিবিআই, ১৮ ফেব্রুয়ারি হলফনামা দিয়ে তার জবাব দিতে হবে। আদালত জানিয়েছে, না কলকাতা, না দিল্লী, নিরপেক্ষ জায়গা শিলংয়ে রাজীব কুমারের সঙ্গে কথা বলতে হবে সিবিআইকে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ ফেব্রুয়ারি।
মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি দীপক গুপ্ত ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। প্রথম থেকেই সওয়াল জবাব পর্ব ছিল উত্তেজনাময়। সিবিআই এ দিন মুখবন্ধ খামে একটি হলফনামা জমা দেয়। এদিন ফের দেশের সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানান, সারদা-নারদা তদন্তে রাজ্য সরকার যে সিট গঠন করেছিল তার মাথায় ছিলেন রাজীব কুমার। বারবার তাঁকে নোটিস পাঠানো হয়েছে এই মামলার ব্যাপারে সাহায্য করছেন না। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেননি।
এর জবাবে রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি পাল্টা জানান, পুলিশ কমিশনার এবং সিট ইতিমধ্যেই সিবিআইকে সহায়তা করেছেন। যা তথ্য তাঁদের কাছে ছিল তা তাঁরা ইতিমধ্যেই সিবিআইকে দিয়েছেন। এটা তদন্তে সহায়তায় প্রশ্ন নয়, এটা পুলিশ কমিশনারকে হয়রানি। শুনানি শেষে সিঙ্ঘভি আরও বলেন, ‘রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে গত ৫ বছরে কোনও এফআইআর করা হয়নি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় তথ্য লোপাটের অভিযোগেও কোনও এফআইআর হয়নি রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। তাঁর পদকে অবমাননা করা হয়েছে।’
এদিনের সুপ্রিম রায়কে ইতিমধ্যেই ‘নৈতিক জয়’ বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আলোচনা চেয়ে সিবিআইকে ৫ টা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওরাই আলোচনা করেনি। এটা আমাদের নৈতিক জয়।’ জানা গেছে, সিবিআইয়ের নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে রাজীব কুমার নিজেও একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন সিবিআইকে। তিনি নিরপেক্ষ জায়গায় সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। এদিন সুপ্রিম কোর্টও ওই একই কথাই বলেছে। এই সকল কারণেই সুপ্রিম রায়ে কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্যকেই জয়ী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।