এর আগে বঙ্গে রথযাত্রায় মুখ পুড়েছে বিজেপির। আর কলকাতা পুলিশ বনাম সিবিআই দ্বৈরথ নিয়ে রবিবার রাত থেকে সত্যাগ্রহয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে তোপ দাগছেন, তাতে বিরোধীদের সিবিআইয়ের জুজু দেখাতে গিয়ে ভয় ধরছে খোদ বিজেপি শিবিরেই। শুধু তাই নয়, মমতার সুরে সুর মিলিয়ে একজোট হচ্ছেন রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে প্রায় সব বিরোধী নেতাই।
অন্যদিকে, বিরোধী জোটের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও সোমবার সিবিআই প্রশ্নে সরব হয়েছে নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও। সংসদে গতকাল দলের লোকসভার দলনেতা ভর্তৃহরি মেহতাব বলেন, ‘সামনেই লোকসভা নির্বাচন। দু’তিন মাস পর নতুন সরকার আসতে চলেছে। এই সময় রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদের জব্দ করতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। এমন আচরণ বন্ধ হওয়া উচিত।’ তাঁর অভিযোগ, উড়িষ্যাতেও একইভাবে ভোটের মুখে সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে এক বিচারকের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি একটি ভুয়ো অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় বিজেডির দুই নেতাকেও নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই।
ইতিমধ্যেই বিজেপির অন্দরে এই গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে, সিবিআই অস্ত্র কার্যত বুমেরাং হতে বসেছে। সিবিআইকে কাজে লাগানো হয়েছিল বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে, যাতে তারা বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে বাধ্য হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, প্রায় সব বিরোধী দলই সিবিআই নিয়ে ভুক্তভোগী হয়ে আরও কাছাকাছি চলে আসছে। সিবিআই কার্যত ঐক্যবন্ধনের কাজ করছে। যে কারণে মমতা পাশে পেয়েছেন রাহুল-অখিলেশ-মায়া-কানিমোঝি-কেজরী-তেজস্বীদের।
বিজেপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘বিরোধী শিবিরে যত ফাটল ধরবে, বিজেপির লাভ। কিন্তু সিবিআই নিয়ে ভয় না পেয়ে উল্টে সকলে একজোট হচ্ছে। ঠিক যেমনটি উত্তরপ্রদেশে হয়েছে মায়া-অখিলেশে!’ এঁরা যা ঘরোয়া ভাবে বলছেন, সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তা-ই খোলাখুলি বলেছেন, ‘মমতা বরাবর লড়াকু। তাঁকে নিয়ে সতর্ক থাকা দরকার।’ পরিস্থিতি সামাল দিতে গতকাল তাই দিল্লীতে দফায় দফায় বিজেপি নেতাদের বৈঠক হল। অবশেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্করকে প্রকাশ্যেই বলতে হল, সিবিআই যেন একেবারেই নাথা না নোয়ায় আর বিজেপি কর্মীরাও যেন দমে না যান। এই কথাতেই স্পষ্ট যে, সিবিআই অস্ত্র ক্রমশই বুমেরাং হয়ে উঠছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। যা নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে পারছেন না দলের শীর্ষ নেতারাই।