প্রতি বছর ৫০ হাজার বেকার যুবক-যুবতী পাবেন এক লক্ষ করে টাকা! সোমবার রাজ্য বাজেটের ঘোষণায় এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর কথায়, স্বনিযুক্তি প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে এই অর্থ অনুদান দেওয়া হবে কর্মহীন তরুণ-তরুণীকে। এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে বিধানসভায় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট পেশের আগেই কেন্দ্রর স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সমর্থনে মোদী সরকারকে আক্রমণ করে অমিত মিত্র অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় কেন্দ্র অযাচিত হস্তক্ষেপ করে চলেছে।
কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের একাধিক প্রকল্পকে নকল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও জিডিপি বৃদ্ধিতে বাংলা এক নম্বর জায়গা করে নিয়েছে। যা দেশে রেকর্ড বলে দাবি অমিতের। এর পাশাপাশি বাজেট পেশের আগে রাজ্যের একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথাও বলেন তিনি। জানান, মোদী সরকার যখন কৃষকদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন তখন বাংলার কৃষকদের আয় তিনগুণ বেড়েছে। কৃষকদের ১০০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ধান দিন চেক নিন প্রকল্পের সুবাদে ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। ফসলবিমা যোজনায় ২৪ লক্ষ কৃষকের নাম নথিভুক্ত হয়েছে। খাদ্যসাথী প্রকল্পে উপকৃত হয়েছেন রাজ্যের ৮ কোটি ৮২ লক্ষ মানুষ।
রাজ্য বাজেটে এক কথায় কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারের একাধিক প্রকল্পকে তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। মোদী যেখানে বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছিল। যদিও গত চার বছরে দেশে ২ কোটি মানুষের চাকরি গিয়েছে। রাজ্যের ৫০ হাজার বেকার যুবক-যুবতীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে তোলার জন্য এককালীন ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন অমিত মিত্র। ২০১১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মমতা সরকার শিক্ষিত ও বেকার যুবক-যুবতীদের কাজের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নানা রকম কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে রাজ্যে। অনেকেই মনে করছেন, এই এককালীন ১ লক্ষ টাকা পেলে রাজ্যের বহু যুবক-যুবতীই নিজের কাজের সংস্থান করতে পারবে।
এর পাশাপাশি রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়িকর্মীদের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে আশাকর্মীদের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে উপকৃত হবেন ২ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়িকর্মী এবং ২০ হাজারেরও বেশি আশাকর্মী। অন্যদিকে, চুক্তি ভিত্তিক গ্রুপ ডি এবং গ্রুপ সি কর্মীদের মাসিক ভাতা ২০০০ টাকা করে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন অমিত মিত্র। এমনকি চুক্তি ভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি কর্মীদেরও মাসিক ভাতা ২০০০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। বাজেটে ঘোষণা হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই তাঁরা নতুন হারে বেতন পাবেন। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অবসর গ্রহণের পর যে ২ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হত সেটি বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ ডি কর্মীদের যাঁরা মাধ্যমিক উত্তীর্ণ এবং তিন বছর যাঁরা কাজ করে ফেলেছেন তাঁদের গ্রুপ সি পদে উন্নীত করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ভোটের আগে রাজ্য বাজেটের ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে রীতিমতো ছক্কা হাঁকিয়েছেন, এই আলোচনা সব মহলেই চলছে। অঙ্গনওয়াড়ি ও আশাকর্মীদের ভাতা বাড়ানো বা গ্রুপ ডি-র ঠিকাকর্মীদের মাইনে বাড়ানো– সব ক্ষেত্রেই একের পর এক দরাজ সুবিধা ঘোষণা করেছে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার। বরাবরের মতো এবারও রাজ্য বাজেটের মূল আকর্ষণ ছিল একাধিক কর্মসংস্থানমুখী সিদ্ধান্ত। এক কথায় বলতে গেলে, এই রাজ্য বাজেট রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের কাছেই খুশির বার্তা বয়ে এনেছে।